আউলাদ
ফররুখ আহমদ
আমি দেখি পথের দু'ধারে ক্ষুধিত শিশুর শব,
আমি দেখি পাশে পাশে উপচিয়া পড়ে যায়
ধনিকের গর্বিত আসব,
আমি দেখি কৃষাণের দুয়ারে দুর্ভিক্ষ বিভীষিকা,
আমি দেখি লাঞ্ছিতের ললাটে জ্বলিছে শুধু অপমান টিকা,
গর্বিতের পরিহাসে মানুষ হ'য়েছে দাস,
নারী হল লুণ্ঠিত গণিকা।
অনেক মঞ্জিল দূরে প'ড়ে আছে মানুষের ঘাঁটি,
এখানে প্রেতের বহির্বাটী
এখানে আবর্তে পথহারা
চলিতেছে যারা
তাদের দিয়েছে ডাক জড়তার ক্রুর আজদাহা,
শতকের সভ্যতায় এরা আজ হল তাই অন্ধ, গুমরাহা।
বাড়ায়ে ত্রস্তের দল, বাড়াবে ভ্রষ্টের দল,
নর-ঘাতকের সাথে, নারী ঘাতকের হাতে
হ'ল এরা শোণিত-চঞ্চল,
হ'ল এরা জালিম, নিষাদ,
মানুষের অমানুষ মৃত আউলাদ।
পায় পায় বাঁধা দেয় শৃঙ্খল-বন্ধন,
থেকে যায় জীবন-স্পন্দন,
মানুষের আদালতে
পাথর-জমানো প্রহসন।
এবার
ক্লীবের প্রতীক এই মানুষের আদালতে নয়,
শয়তানের কাদা মাখা কালো পথে নয়-
এবার আল্লাহ্র আদালতে
আমাদের ফরিয়াদ,
ক্ষুধিত লুণ্ঠিত এই মানুষের রিক্ত ফরিয়াদ।
অনেক সভ্যতা জানি মিশেছে ধূলির নীচে, অনেক সমুদ
কত ফেরাউন, কত জালিম পিশাচ নমরুদ
মিশে গেল ধূলিতলে
নতুন যাত্রীর দল দেখা দিল দুর্গম উপলে
উড়ায়ে নিশান
সাথে করে নিয়ে এল জীবনের অ-শ্রান্ত তুফান।
শুনি আজ তাদেরি দামামা
বাতাসে বাতাসে ওড়ে তাহাদের বিজয়ী আমামা
শুনি শুধু তাহাদেরি স্বর
বলিষ্ঠ বক্ষের তলে সুকোমল অন্তরের স্বর...
আর যেন ক্লিষ্ট নাহি হয়,
পথে দেখি পীড়নের ফাঁদ,
আর যেন ভ্রষ্ট নাহি হয়
মানুষের ভবিষ্য দিনের আউলাদ।।
~ (সংক্ষেপিত)