শনিবার, ২০ জুন, ২০২০

নিভৃত দ্যোতনা

সুড়ঙ্গ শেষের যে আলো
তা কি কেবলই অনুপ্রেরণার? 
মাঝে মাঝে ট্রেনের হেডলাইট হয়ে এসেও তো, 
চুরমার করে দিয়ে যায় 
গল্পের শেষটা। 

জীবন তবুও ফিরে আসে
তন্দ্রাহারা নিশীথের ক্লান্তিহীন দীর্ঘশ্বাসে,
অথবা এমনই নিরন্তর বয়ে যায়
ফেলে আসা ঝরা পাতার বিছানায়। 
দিবসের জেগে থাকা কোনো স্বপনে,
দমকে আন্দোলিত অনুরণনে। 

তারপর পৃথিবীতে পার করে অনেক বেলা,
সে কি হয় তৃপ্ত? 
প্রশান্ত আত্মার মতো! 
না কি দূর কোনো পর্বতের আরাধ্য ছায়ায়, 
আলেয়ার অলীক মায়ায়, 
সুড়ঙ্গের শেষ আলোর মুখ
আজও সে খুঁজে বেড়ায়? 

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০

কিছু ছন্নছাড়া সময়ের গল্প ৭

প্রেমহীনতার এই শহরে
থাকছি না আর
সময় কোথায় সময় হারাবার!

যেথায় ফুঁ দিলেই একটা পাতা পাখি হয়ে উড়ে যায় 
হাতের তুড়িতে কাগজের নৌকা ভেসে বেড়ায়, 
জাদুর নদীর ওপারে! 
সেথায় ওক কাঠের ঘন বেড়ার ফাঁকে 
মায়াবী জোড়া চোখের মত চেয়ে থাকে 
বেগুন রঙা পিটুনিয়া 
আর টকটকে লাল ইরিথ্রিনা। 
টিনের চালায় থামে না একজোড়া চড়াইয়ের মিষ্টি খুনসুটি
যতক্ষণ না নামছে অঝোর ধারার ঘোরলাগা বৃষ্টি।

রাত হলে যেখানে চাঁদের গা থেকে 
মুঠো মুঠো রূপো ঝরে     
ভালোবাসা হয়ে,
সেখানে স্বপ্ন সাজাবো বলে
একদিন ছুটি নেবো 
তোমাদের লকড ডাউন এই পৃথিবী থেকে!                 
 ছবি ঃইন্টারনেট   

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯

টুকরো জীবন ১০

আমার গল্পেরা জমা হতো চোখের তারায়
সন্ধ্যাতারার সাথে থেকে
গল্প শোনার সাথী হতে 
তোমার আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে,
সে ভাষা তোমায় শিখিয়ে দিলাম পরে,

তুমি নিজেই গল্প লিখে দিলে।

চলে যাবার গল্পেও ত
রয়ে যায় স্মৃতি!
তবে তুমি বড্ডো একপেশে খেলে গেলে!
তাই, দীর্ঘ রাত্রির বুক চিড়ে
নির্দয় মঞ্চস্থ হলো,
পৃথিবীর আরেকটি পুরনো গল্প৷

খেরোখাতার ছেঁড়া পাতায় তাই এখন
গল্প বলিয়ে এক মেয়ের,
গল্প জমা হয়।

যে ভাষা বড়ো দুর্বোধ্য।। 

শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

দরজার ওপাশে

অন্ধকারের আলো হিসেবে
এখনো শেষ বাতিটা জ্বলছে।
যদিও বহু আগেই নিভে গেছে
সূর্যালোকিত স্বচ্ছ জলে তার টিমটিমে ছায়া।

আধেক শহর ঘুমিয়ে
সামনের রেলিঙটায় দু'একটা
কাক এসে নেমে যায়
দূরে ছাতা হাতে অশীতিপর এক বৃদ্ধের কায়া!

পরের ছত্রে হয়তো
নিশ্চিত করাঘাতে কাঁপবে গোটা বাড়িটা।

ভালো থাকার কী এক আজন্ম লালসায়,
একটা জনম কেটে গেল
ঘোর অনিশ্চয়তায়।
আজও তাই শেষপ্রহরের করাঘাতে
দ্বিধান্বিত মানব মন
শেষ আলোটা হাতড়ে বেড়ায়,
নিঃসীম শূন্যতায়।

প্রতিশব্দের গল্প

আজকাল শব্দেরা,

জোনাকির মতো জ্বলে উঠে মাঝে মাঝে
রাত্রি গভীর হওয়ার অনেক আগেই,
তারপর ঢেকে যায়
অন্ধকার মৌন মিছিলে।

অথবা, দূর কোন নদীর বুক থেকে
ভেসে আসে এক চিলতে বাতাস হয়ে,
দোলা দেয় ধানের বাড়ন্ত শীষে
নীরবে, নিভৃতে।

একেকদিন বিকেলে ম্লান হয়ে যায়
যে আলো,
দিগন্তরখার ওপারে
আমার শব্দেরা হারায় কখনো তাদের সাথে। 

আর এভাবেই আমার যাপিত প্রতিটি দিন
নৈশব্দের ভারে হয়ে উঠে শব্দহীন।।। 

          

অনভ্যস্ত আত্মকথন ১

ছোটকাল থেকেই আমি বেশ পাকনা বাচ্চা ছিলাম। আব্বুর কাছে শুনেছি যখন আমার বয়স ৩ তখন আম পাতা জোড়া জোড়া টাইপ সব ছড়াই না কি আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল! আমি বেশ গোঁ ধরলাম এই বইয়ের ছড়া আর পড়বো না। তখন আব্বু তাঁর একাদশের বই এর প্রিয় দুটি কবিতা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল।
" একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
     চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।"
আর 
" এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।"
তারপর থেকে কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো, 'বাবু, একটা ছড়া বলো তো?' আমি না কি এ কবিতা দুটি শুনিয়ে দিতে খুব মজা পেতাম।  

সবচেয়ে প্রিয় উপহার ছিল ফুল আর বই। এ দুটোর প্রতি আমার টান বরাবরের। ফুল সম্পর্কিত একটা ঘটনা স্মরন করতে গিয়ে আম্মুর চোখ এখনো ভিজে যায়। সেবার ঈদের আগের রাত। আমি সিক্স কি সেভেনে পড়ি। আমার জুতা-কাপড় কিছুই কেনা হয়নি। পুরো মার্কেট ঘুরে যখন খালি হাতে বের হলাম তখন রাত ১১টা। কেনো কিনতে পারলাম না আমার ছোট্ট মাথায় তখন সেটা ঢুকে নি। মার্কেটের বাইরে ফুল বিক্রি হচ্ছিল। আব্বু জিজ্ঞেস করলো, নিবি? আমি আগেই দৌড়। ১০টা স্টিক তখন ২০ টাকায় কেনা হয়েছিল। তাই পেয়ে আমি মহাখুশি। নিজে থেকেই নাকি বললাম আমার জুতা, জামা কিচ্ছু লাগবে না। চলো বাসায়। এগুলা দিয়ে সাজাবো। পরে অবশ্য অনেক রাতে অন্য এক জায়গা থেকে কেনা হয়েছিল ওসব।
আর বইয়ের বেলায় বলতে হয় কাগজ পেলেই খুলে পড়ার অভ্যেস ছিল। একারনে ছোটবেলায় একবার ধরা ও খেয়েছি। অন্যের গোপন জিনিস পড়ে ফেলার দায়ে। যদিও তা অনিচ্ছাকৃত ছিল। পড়ার অভ্যেস এত মারাত্মক ছিল যে ফুটপাতের প্রেমের বই থেকে হ্যারি-পটার, শার্লক সবই পড়েছিলাম স্কুল লেভেলেই। সৃষ্টিকর্তা ও আমার প্রতি প্রসন্ন ছিলেন বোধহয়। যে কারনে বহু প্রতিযোগিতা জিতে পেয়েছিলাম অসংখ্য বই।

আমি সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম দু'বার। সেই সাড়ে চারে আর এই ছাব্বিশে। দু বারেই সমুদ্রের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। সাড়ে চারে আম্মুর হাত থেকে ছুটে গিয়েছিলাম আর ছাব্বিশে বেখেয়ালে ভেসে গিয়েছিলাম। কে জানে আমার নামের সাথে মিল আছে দেখেই কি না ঢেউ আমাকে এত টানে...

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

টুকরো জীবন ৯

কোনো দিন মধ্যদুপুরে হঠাৎ ফোনের রিংটোন
বেজে উঠবে না আর!
'ঔষধ খেয়েছি কি না?'
তা জেনে যাপিত জীবন
কতটুকু আর ভরে!
জীবনের তৃষ্ণা তাই ফুরিয়ে যায়,
ঔষধের তৃষ্ণা বাড়ায়।

পার্কের সেই তালগাছটা এখন
সন্ধ্যার অন্ধকারে আরো বড় দেখা যায়।
সে কি জানে?
কোনও এককালে তার হাওয়ায় ভাসা মানব হৃদয়,
আজ সময়ের বেরহম স্রোতে ভেসে যায়।
এ মানব জনম,
বড় শূন্য হাতে ফিরায়!