রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

কবিতার প্রহর ৯

আউলাদ

ফররুখ আহমদ


আমি দেখি পথের দু'ধারে ক্ষুধিত শিশুর শব,
আমি দেখি পাশে পাশে উপচিয়া পড়ে যায়
ধনিকের গর্বিত আসব,
আমি দেখি কৃষাণের দুয়ারে দুর্ভিক্ষ বিভীষিকা,
আমি দেখি লাঞ্ছিতের ললাটে জ্বলিছে শুধু অপমান টিকা,
গর্বিতের পরিহাসে মানুষ হ'য়েছে দাস,
নারী হল লুণ্ঠিত গণিকা।

অনেক মঞ্জিল দূরে প'ড়ে আছে মানুষের ঘাঁটি,
এখানে প্রেতের বহির্বাটী
এখানে আবর্তে পথহারা
চলিতেছে যারা
তাদের দিয়েছে ডাক জড়তার ক্রুর আজদাহা,
শতকের সভ্যতায় এরা আজ হল তাই অন্ধ, গুমরাহা।

বাড়ায়ে ত্রস্তের দল, বাড়াবে ভ্রষ্টের দল,
নর-ঘাতকের সাথে, নারী ঘাতকের হাতে
হ'ল এরা শোণিত-চঞ্চল,
হ'ল এরা জালিম, নিষাদ,
মানুষের অমানুষ মৃত আউলাদ।

পায় পায় বাঁধা দেয় শৃঙ্খল-বন্ধন,
থেকে যায় জীবন-স্পন্দন,
মানুষের আদালতে
পাথর-জমানো প্রহসন।

এবার
ক্লীবের প্রতীক এই মানুষের আদালতে নয়,
শয়তানের কাদা মাখা কালো পথে নয়-
এবার আল্লাহ্‌র আদালতে
আমাদের ফরিয়াদ,
ক্ষুধিত লুণ্ঠিত এই মানুষের রিক্ত ফরিয়াদ।

অনেক সভ্যতা জানি মিশেছে ধূলির নীচে, অনেক সমুদ
কত ফেরাউন, কত জালিম পিশাচ নমরুদ
মিশে গেল ধূলিতলে
নতুন যাত্রীর দল দেখা দিল দুর্গম উপলে
উড়ায়ে নিশান
সাথে করে নিয়ে এল জীবনের অ-শ্রান্ত তুফান।
শুনি আজ তাদেরি দামামা
বাতাসে বাতাসে ওড়ে তাহাদের বিজয়ী আমামা
শুনি শুধু তাহাদেরি স্বর
বলিষ্ঠ বক্ষের তলে সুকোমল অন্তরের স্বর...

আর যেন ক্লিষ্ট নাহি হয়,
পথে দেখি পীড়নের ফাঁদ,
আর যেন ভ্রষ্ট নাহি হয়
মানুষের ভবিষ্য দিনের আউলাদ।।

~ (সংক্ষেপিত)

শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

রহমতের বর্ষণে সিক্ত হতে আপনি তৈরি তো ?


বৃষ্টি নামলে বিভিন্ন নদী, নালা, ডোবা, পুকুর, নিজ নিজ প্রশস্ততা ও গভীরতা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি
ধারণ করে। ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশ নিজের উর্বরতা অনুসারে ফসল উৎপাদন করে। অথচ বৃষ্টির পানি ভূখণ্ডের সকল অংশে সমানভাবে বর্ষিত হয়। একটি বড় প্রশস্ত পুকুরে যে পরিমাণ পানি ধারণ করা যায় একটি ছোট কলসির পক্ষে সে পরিমাণ পানি ধারণ করা সম্ভব নয়। এমনিভাবে যদি বিস্তীর্ণ মরুভূমি বা অনুর্বর জমিতে বৃষ্টির পানি পড়ে, তাতো শুধু প্রবাহিত হয়েই চলে যায়। ভূমি তা থেকে উপকৃত হতে পারে না। কিন্তু উর্বর ভূমিতে বৃষ্টির পানি পড়লেই ফসল জীবন্ত হয়ে উঠে। ঠিক একই অবস্থা মানুষের। রমযানুল মোবারকের এ রহমতের বর্ষণ থেকে আপনি কি কিছু পাবেন?

উর্বর ভূমির মত আপনার মন নরম, চক্ষু অবনত করুন, অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করুন, নিজের যোগ্যতা ও ধারণ ক্ষমতা থাকলে বীজ অঙ্কুরিত হবে, সম্পূর্ণ বৃক্ষ হবে। আর বৃক্ষ সৎকাজের ফুল-ফল ও পত্ররাজিতে সুশোভিত হয়ে উঠবে। অতপর আপনি সাফল্যের ফসল কেটে ঘরে উঠাবেন। কৃষকের মত আপনি শ্রম দেবেন, কাজ করবেন, প্রতিদানে জান্নাতের পুরস্কারসমূহের ফসল আপনার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকবে। যতবেশি শ্রম দেবেন, ততবেশী ফসল পাবেন। পক্ষান্তরে যদি আপনার মন পাথরের মত শক্ত হয় এবং আপনি অসতর্ক কৃষকের মতো শুয়ে-বসে দিন কাটান, তাহলে রোযা, তারাবীহ, রহমত ও বরকতের সমস্ত পানি বয়ে চলে যাবে এবং আপনার তহবিলে কিছুই আসবে না।

প্রকৃত অর্থে আল্লাহ্‌র দেয়া সুযোগ ছাড়া সত্যিই কিছু পাওয়া যায় না। আর এই আল্লাহ্‌র দেয়া সুযোগ শুধু তাদেরই হস্তগত হয়, যারা চেষ্টা সাধনা ও পরিশ্রম করে। দেখুন এ ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা'আলা কি বলেন?
আপনি তাঁর দিকে একহাত অগ্রসর হলে আল্লাহ্‌ আপনার দিকে দু'হাত অগ্রসর হবেন। আপনি তাঁর দিকে হেঁটে অগ্রসর হলে তিনি আপনার দিকে দৌঁড়ে অগ্রসর হবেন। - মুসলিম
কিন্তু পেছন দিকে ফিরে, অসচেতন বা বেপরোয়াভাবে আপনি যদি দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে বলুন, আল্লাহ্‌ কিভাবে আপনাকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেবেন?

পুরো রমযান মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাবে, আর আপনার তহবিল শূন্য থেকে যাবে, এমন দূর্ভাগ্যজনক অবস্থা কেউ সৃষ্টি করবেন না। কিছু করার জন্য এবং নিজের ভাগের রহমত পাওয়ার জন্য কোমর বেঁধে দাঁড়ান এবং রসূল (সাঃ)-এর এ সতর্কবাণীটি ভালোভাবে স্মরণ রাখুন।
"অনেক রোজাদার এমন আছে, যারা নিজেদের রোজা থেকে ক্ষুৎ-পিপাসার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না। অনেকে রাতের নামাজে পড়ে থাকে, তাদের নামায রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না।" - দারেমী
রসূল সাঃ রমযানের আগমনের পূর্বে সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে এ মাসের মহত্ত্ব ও বরকত সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং বরকতের ভাণ্ডার থেকে নিজেদের পরিপূর্ণ অংশ সংগ্রহ করার জন্য ব্যাপক পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিতেন।

- খুররম মুরাদ
বই : খোশ আমদেদ মাহে রমযান

রামাদানের প্রস্তুতি, করণীয়, বর্জনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে 'কুরআনের আলো' ওয়েবসাইটে পড়তে পারেন
রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল - প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার 

এছাড়া 'আলোর পথে' ব্লগে রামাদানের প্রস্তুতি সংক্রান্ত লেখাগুলোও পড়ে আসতে পারেন
রামাদান । আলোর পথে

আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সকলকে এ রামাদানে আরো বেশী তাকওয়া অর্জনের তৌফিক দান করেন। আমীন।

বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

শূন্যতার পরিসমাপ্তি

আবারো রাত্রিশেষের নরম ভোর            
কড়া নাড়ছে দরজার,
তার আগমনধ্বনি মিশে গেছে
অপেক্ষার ক্রান্তিকালে দাঁড়ানো আমাদের প্রসন্ন তাকবীরে।

জং ধরা হৃদয়ের টুকরাগুলো
ঝলসে উঠুক আরেকবার,
আর চারপাশে মুক্তোর দানা হয়ে ছড়িয়ে থাকা সময়
অপেক্ষায়...
কুড়িয়ে নেয়ার।
তারপর হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিংড়ে দেয়া
অনন্ত প্রেমময়ের প্রতি।
বুঝিবা মহাসিন্ধুর মাঝে একফোঁটা জল
সিক্ত হয়ে উঠা প্রতিটি রগরেশার।

তারপর আবারো অপেক্ষা
শাণিত হয়ে উঠা অব্যর্থ হৃদয়ের,
আরেকটি কালরাত্রির পরাজয়ের সাক্ষ্য হবে বলে।
জুলুমের অন্ধকার ফেটে প্রদীপ্ত হোক সোনালী ভোর,
আর তার আগমনধ্বনি মিশে যাক,
অপেক্ষার ক্রান্তিকালে দাঁড়ানো আমাদের প্রসন্ন তাকবীরে।।