শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতার প্রহর ৪

দ্বীপ নির্মাণ

ফররুখ আহমদ


প্রবাল দ্বীপের গোঁড়া পত্তন হবে,  
কি করে সে কথা হ'য়ে গেল জানাজানি!
দল বেঁধে এল অযুত প্রবাল কীট
কাঁপায়ে দু'পাশে দরিয়ার লোনা পানি।

রেখে এল তা'রা জীবনের সব সাধ,
ফেলে এল তা'রা জীবনের সব গান,
নব সৃষ্টির পথ চলে উন্মাদ,
ভিত্তি মূলেই জীবন করিতে দান।

অযুত, লক্ষ, কোটি প্রবালের দেহে
শত যুগ ধরি' সেই দ্বীপ গ'ড়ে ও'ঠে
কোটি প্রবালের তনুতে না হয় যদি
আরো বহু কোটি প্রবাল কীটেরা জোটে।

কবে দূরচারী পথিক পাখিরা এসে
কাকলি মুখর সে দ্বীপে বাঁধবে ঘর,
জাগবে কখন প্রবাল দ্বীপের বুকে
নারিকেল শাখে স্বপ্নের মর্মর।

প্রবাল কীটেরা জানেনা সে কথা, তবু
দল বেঁধে তা'রা করে গোঁড়া পত্তন।
বৎসর কাটে.... শতাব্দী কেটে যায়...
তবু কোনদিন হয়নাতো উন্মন।

আকাশের মাটিতে আসে বদলের পালা
কত তারা নেভে, জ্বলে কত শশী রবি,
প্রবাল দ্বীপের কীটেরা ভিত্তি গড়ে
ধৈর্য, ত্যাগের সহিষ্ণুতার ছবি।  

রাখে না খবর খোঁজ রাখে না তো কেউ,
কেউ কোন দিন সন্ধান নাহি করে,
প্রবাল কীটেরা নিভৃতে গড়ে দ্বীপ
সকল আঁখির; সকলের অগোচরে।

প্রবাল দ্বীপের গোঁড়া পত্তন হবে,
কি করে পেয়েছে তা'রা সেই হাতছানি!
মৃত্যু যাদের ত্যাগের মহান ছবি
মরণেই তা'রা পায় যে জিন্দেগানি।

 

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বিবর্ণতার ছুঁয়ে যাওয়া

সাতরঙা স্বপ্নেরা ভিড় করে                        
কুয়াশার চাদর মোড়া জানালার গা'য়,
এপারে তারই প্রতীক্ষায়,
অকৃতী আমি
দেখি শুধু তাদের ক্ষয়ে যাওয়া।
তারপর কুয়াশা কেটে গেলে
পরে রয় ভগ্নাবশেষ,
বিবর্ণ স্বপ্নের।
প্রাপ্তিরা এসে মিলে শূন্যতায়।
থমকে থামি, সব নিয়েই কি বাঁচতে হয়?

অপেক্ষার দিনলিপিতে
থাক না তোলা সেসব কিছু,
অবসরের এইটুকু সুখ
রইলো না হয় পিছু পিছু।  

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

যে আলো ছুঁয়েছে হৃদয়

নিকিতা, জাপানের একজন তরুণী। বর্তমান নাম খাওলা। ইসলামের আলোয় আলোকিত হবার পর তিনি তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন এক দীর্ঘ বক্তৃতায়। তারই সংক্ষেপিত অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো :
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে অধিকাংশ জাপানীর ন্যায় আমিও কোন ধর্মের অনুসারী ছিলাম না। ফ্রান্সে আমি ফরাসী সাহিত্যের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার জন্য এসেছিলাম। আমার প্রিয় লেখক ও চিন্তাবিদ ছিলেন সাঁর্তে, নিৎশে ও কামাস।

ধর্মহীন ও নাস্তিকতা প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। আমার অভ্যন্তরীণ কোন প্রয়োজন নয় শুধুমাত্র জানার আগ্রহই আমাকে এ সম্পর্কে উৎসাহী করে তোলে। মৃত্যুর পরে আমার কী হবে তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা ছিল না, বরং কিভাবে জীবন কাটাব এটাই ছিল আমার আগ্রহের বিষয়। আমি শুধু সত্যকে জানতে চাইছিলাম। যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকে তাহলে তাঁর সাথে জীবন- যাপন করব, আর যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে না পাই তাহলে নাস্তিকতার জীবন বেছে নেব এটাই আমার উদ্দেশ্য।
 
ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে আমি পড়াশুনা করতে থাকি। ইসলাম ধর্মকে আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি। আমি কখনো চিন্তা করিনি যে এটা পড়াশুনার যোগ্য কোন ধর্ম। আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, ইসলাম ধর্ম হল মূর্খ ও সাধারণ মানুষদের একধরণের মূর্তিপূজার ধর্ম। কত অজ্ঞই না আমি ছিলাম! আমি কিছু খৃষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করি। তাদের সাথে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। বেশ কিছুদিন গত হওয়ার পর আমি স্রষ্টার অস্তিত্বের বাস্তবতা বুঝতে পারলাম। কিন্তু, আমি অন্তরে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছিলাম না। আমি গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু, আমি অন্তরে স্রষ্টার অনুপস্থিতিই অনুভব করতে লাগলাম। অনেক বিষয় আমি বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারলাম না। আমার ধারণা ছিল ঈশ্বর যদি থাকেন তাহলে তিনি হবেন সকল মানুষের জন্য এবং সত্য ধর্ম অবশ্যই সবার জন্য বোধগম্য ও সহজ হবে। আমি বুঝতে পারলাম না তাঁকে পেতে হলে কেন স্বাভাবিক জীবন পরিত্যাগ করতে হবে। আমি এক অসহায় অবস্থার মধ্যে নিপতিত হলাম।

এমতাবস্থায় আমি একজন আলজেরীয় মুসলিম মহিলার সাথে পরিচিত হলাম। তার জীবনযাত্রা ছিল একজন সত্যিকার মুসলিমের জীবন যাত্রা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রতি তার বিশ্বাস ছিল খুবই তীব্র। তার জ্ঞানহীন বিশ্বাস আমাকে বিরক্ত ও উত্তেজিত করে তোলে। আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। শুরুতেই আমি কুর’আনের এক কপি ফরাসী অনুবাদ কিনে আনি। কিন্তু আমি ২ পৃষ্ঠা ও পড়তে পারিনি, কারণ আমার কাছে তা খুবই অদ্ভুত মনে হচ্ছিল।
আমি একা একা ইসলামকে বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিলাম এবং প্যারিস মসজিদে গেলাম। সেদিন ছিল রবিবার এবং মসজিদে মহিলাদের একটি আলোচনা চলছিল। এই প্রথম আমি ধর্মপালনকারী মুসলিমদের সাথে পরিচিত হলাম। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, নিজেকে তাদের মধ্যে অনেক আপন বলে মনে হচ্ছিল।
প্রত্যেক রবিবার আমি আলোচনায় উপস্থিত হতে লাগলাম, সাথে সাথে মুসলিম বোনদের দেওয়া বইপত্র পড়তে লাগলাম। আমার মনে হচ্ছিল, আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সিজদারত অবস্থায় স্রষ্টাকে আমার অত্যন্ত নিকটে বলে অনুভব করতাম। 
দু বছর আগে যখন ফ্রান্সে আমি ইসলাম গ্রহণ করি তখন মুসলিম স্কুল ছাত্রীদের ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা নিয়ে ফরাসীদের বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। আমার বুঝতে খুব কষ্ট হত, মুসলিম স্কুল ছাত্রীদের  মাথায় ওড়না রাখার মত সামান্য একটি বিষয় নিয়ে ফরাসীরা এত অস্থির কেন? তাদের কেউ কেউ মনে করে, যে সকল মহিলা পর্দা মেনে চলে বা চলতে আগ্রহী তারা মূলত প্রচলিত প্রথার দাসত্ব করেন। তাদের মধ্যে যদি নারীমুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীন চিন্তার আহবান সঞ্চারিত করা যায় তাহলে তারা পর্দাপ্রথা পরিত্যাগ করবে।
এ ধরণের উদ্ভট ও বাজে চিন্তা শুধু তারাই করে যাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা খুবই সীমাবদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিরোধী চিন্তাধারা তাদের মনমগজ এমনভাবে অধিকার করে নিয়েছে যে তারা ইসলামের সার্বজনীনতা ও সর্বকালীনতা বুঝতে একেবারেই অক্ষম।

ইসলামী পোশাক বা হিজাবে আমি নিজেকে নতুন ব্যক্তিত্বে  অনুভব করলাম। আমার মনে হল, আমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়েছি, আমি সংরক্ষিত হয়েছি। আমি অনুভব করতে লাগলাম আল্লাহ্‌ আমার সঙ্গে রয়েছেন। একজন পুলিশ যেমন ইউনিফরম পরিহিত অবস্থায় তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে অধিক সচেতন থাকেন, তেমনি পর্দার মধ্যে আমি একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে বেশী অনুভব করতে লাগলাম।
ইসলাম গ্রহণের দু’সপ্তাহ পর আমি জাপান চলে আসি। ফরাসী সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। উপরন্তু আরবি শেখার প্রতি আগ্রহ অনুভব করতে লাগলাম। এ আগ্রহ আমার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠল। অবশেষে আমি মিশরের রাজধানী কায়রোতে পাড়ি জমালাম।

খিমার বা ওড়না পরা বোনদেরকে সত্যিই অপূর্ব দেখাতো। আমার এক মিশরীয় বোন আমাকে বললেন আমি যেন জাপান ফিরে গিয়েও এই পোশাক ব্যবহার করি। কিন্তু আমার ধারণা ছিল, যদি এ ধরণের পোশাক পরে জাপানের রাস্তায় বেরোই তাহলে মানুষ আমাকে অভদ্র ও অস্বাভাবিক ভাববে যদিও আমি আমার নতুন পোশাক কে ভালবেসে ফেলেছি। এ পোশাক পরার উদ্দেশ্যে আমি জাপানে ফেরার কয়েকদিন আগে হালকা রঙের ঐ জাতীয় কিছু পোশাক এবং কিছু সাদা খিমার তৈরি করলাম।

আমার সাদা খিমারের ব্যাপারে জাপানীদের প্রতিক্রিয়া ছিল আমার ধারনার চেয়ে ভাল। একবার ট্রেনে যেতে আমার পাশে বসলেন এক আধবয়সী ভদ্রলোক। কেন আমি এরকম অদ্ভুত ফ্যাশনের পোশাক পরেছি তা তিনি জানতে চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আমি একজন মুসলিম। ইসলাম ধর্মে মেয়েদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে , তারা যেন তাদের দেহ ও সৌন্দর্য আবৃত করে রাখে। কারণ তাদের সাজসজ্জা ও অনাবৃত সৌন্দর্য পুরুষদের জন্য সমস্যা তৈরী করে। তাই, নারীদের উচিত নয় দেহ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে সমস্যার সৃষ্টি করা।
মনে হল আমার ব্যাখ্যায় তিনি প্রভাবিত হলেন।  নামার সময় আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেলেন এবং বলে গেলেন তার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল ইসলাম সম্পর্কে আরো জানার, কিন্তু সময়ের অভাবে পারলেন না।

আপনি যদি কোন কিছু লুকিয়ে রাখেন তাহলে তার মূল্য বেড়ে যাবে। নারীর শরীর আবৃত রাখলে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, তখন সে পশুর সমান হয়ে যায়। আমার ধারণা, লজ্জার অনুভূতি থেকেই সভ্যতার শুরু।

কেবলমাত্র পুরুষদের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং তাদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহবান জানিয়ে আমরা সম্ভ্রমহানি ও অত্যাচারের এ সমস্যার সমাধান আশা করতে পারি না। একজন পুরুষ নারীর পরিধানের মিনি-স্কার্টের অর্থ এরূপ করতে পারে : “তুমি চাইলে আমাকে পেতে পারো।” অপরদিকে ইসলামী হিজাব পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয় : “আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ।”         
 
তথ্যসূত্র :
হিজাব ও বাস্তবতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী) বুক সিরিজ :২২

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

স্বর্ণযুগের হাতছানি ২

মুতা যুদ্ধ- যাত্রার একটি মুহূর্ত।

তিন হাজার সৈন্যের মুসলিম বাহিনী আরব সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়া প্রদেশে প্রবেশের পর জানতে পারলো, রোম সম্রাট এক লাখ সৈন্যের বিরাট বাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছে। তার সাথে যোগ দিয়েছে পৌত্তলিক আরবদের আরও এক লাখ সৈন্য। এ খবর জানার পর মুসলিম বাহিনীর অনেকেই পরিস্থিতি সম্পর্কে পরামর্শ করার প্রয়োজন অনুভব করল।

বসল পরামর্শ সভা। কেউ বললেন, 'শত্রু বাহিনীর সংখ্যা রাসূল (সা.) কে অবহিত করে পরবর্তী নির্দেশের প্রতীক্ষায় থাকা উচিত।' কিন্তু অনেকেই এই দ্বিধাগ্রস্ততাকে মেনে নিতে পারলেন না। তাঁদেরই একজন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.), যাকে মুতা যুদ্ধের তৃতীয় সেনাপতি হিসেবে মহানবী (সা.) নিয়োগ দিয়েছিলেন।
তিনি উঠে তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বললেন, ' মুসলিম সৈনিকবৃন্দ, এখন তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হতে পছন্দ করছো না; অথচ তোমরা সবাই শাহাদাত লাভের উদ্দেশ্যে বের হয়েছো। আমরা তো শত্রুর সাথে সংখ্যা, শক্তি ও আধিক্যের দ্বারা লড়বো না। আমরা লড়বো দ্বীনের বলে বলীয়ান হয়ে- যে দ্বীনের দ্বারা আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। তোমরা সামনে ঝাঁপিয়ে পড়। তোমাদের সামনে আছে দুটি কল্যাণের যে কোন একটি - হয় বিজয়ী হবে নতুবা শাহাদাত লাভ করবে।'

সকলে একবাক্যে বলে উঠলো, 'আল্লাহ্‌র কসম! ইবন রাওয়াহা ঠিক কথাই বলেছেন।'

তিন হাজার মুসলমানের কণ্ঠে ধ্বনি উঠল, 'আল্লাহু আকবার।' সিরিয়ার আকাশে এই সম্মিলিত তাকবীর ধ্বনিত- প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সিরিয়ার পথ- প্রান্তরে। 

তথ্যসূত্র : আসহাবে রাসূলের জীবনকথা

কবিতার প্রহর ৩

রাত্রির অগাধ বনে

ফররুখ আহমদ


রাত্রির অগাধ বনে ঘোরে একা আদম-সুরাত
তীব্রতর দৃষ্টি মেলে তাকায় পৃথিবী
জাগো জনতার আত্মা! ওঠো, কথা কও,
কতোকাল আর তুমি ঘুমাবে নিসাড়
নিস্পন্দ, আকাশ ছেয়ে চলেছে যখন
নতুন জ্যোতিষ্ক-সৃষ্টি; তখনো তোমার
স্থবির নিশ্চল বুকে নাই কোন প্রাণদ-ইঙ্গিত
নাই অগ্নিকণা; নাই ধূমকেতু বেগ!
জনতার অপমৃত্যু বুকে নিয়ে পৃথিবী ঘুমায়,
শোষকের রক্ত জমে সমুদ্রের গভীর অতলে
অগ্নিকণা সৃষ্টি হয়-নাকো!

কতকাল ঘুমাবে একাকী?

তোমার পাঞ্জার সাথে জালিমের শাণিত পাঞ্জার
হবে নাকি সুকঠিন প্রানান্ত-প্রয়াস!
হবে নাকি বোঝাপড়া জীবন-মৃত্যুর!
হবে নাকি ব্যর্থতার চাপাকান্না
        জেহাদের ঝড় সাইমুম :
জাগো জনতার আত্মা! ওঠো, কথা কও!

পৃথিবী বিশাল আর বিচিত্র বিশালতর অস্তিত্ব তোমার-
আকাশের দীপ্ত বহ্নি তোমার মুঠিতে
তোমার চোখের কোণে সমুদ্রের রহস্য অসীম
তোমার বুকের মাঝে সুপ্ত দাবানল

পৃথিবীকে কখন জ্বালাবে?
যে- পৃথিবী জালিমের কঠিন মুঠিতে
সে- পৃথিবী জ্বালাবে কখন?
যে- ঘুম মৃত্যুর মত গতিহীন মাদক অশেষ
সেই ঘুম কখন জ্বালাবে?
আজ তুমি চিনে নাও আপন পৃথ্বীরে
গড়ে তোলো পৃথিবী আপন,
নিজের আত্মাকে আজ চিনে নাও তুমি
গড়ে নাও পৃথিবী নিজের
জাগো জনতার আত্মা! ওঠো, কথা কও!


কবিতার প্রহর ২

সিজদার আবে জমজম

গোলাম মোহাম্মদ


একটি জোছনার পর আর একটি চন্দ্রিমা
এইভাবে অন্য এক রূপালী আলোয় আমরা পৌঁছে গেলাম
পূর্ব-পশ্চিম, দক্ষিন-উত্তর সমস্ত প্রবাহের মধ্যে
একটি নিমগ্নতা-একটি গভীরতর বন্ধন।

সাতটি সমুদ্র মিশে আছে একটি ধারায়
সাতটি মহাদেশ মিশে আছে এই রশিতে

সেই জোছনার মধ্যে বিস্ময়কর পাঠের উচ্চারণ             
সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রস্ফুটিত হাজার রাতের ফুল
রহমত বরকত মাগফেরাত কত নামের উপঢৌকন।
চোখের একটি একটি ফোঁটা হীরের পাহাড় যেন;
শুন্য হাতগুলো ভরে উঠলো
বিবর্ণমুখ বর্ণতার উল্লাসে ভরা সূর্য।

এখন দিন নেই- রাত নেই সময়ের গুঁড়োগুলো
আশ্চর্য দানার মতো মূল্যবান মোহনীয়
একটি একটি রুকু অগণিত রুকু
একটি একটি সিজদা অগণন সিজদার আবে জমজম।
একটি চাঁদ রাতের পর আরেকটি চাঁদ
এইভাবে ভরে ওঠার কত সব আয়োজন
রাইয়ানের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হলো
কারুকার্যে ভরা চিত্রল পরিপার্শ্ব এবং তৃষ্ণাহীন
                                   পরিতৃপ্ত সবুজ প্রহর।

হে প্রেমময়! আমাদের আরো প্রেম দান কর
দাঁতাল জালিমের গ্রাস থেকে আমাদের রক্ষা কর
আমরা আমাদের খানা রেখে দিলাম দূরে, তোমার নির্দেশ
এখন পৃথিবীর সমস্ত সবুজ অঞ্চলে আত্মশুদ্ধির দিন
নড়ে উঠার মত সাহসের মিসাইল আমাদের বুকে দান কর।
ক্রুদ্ধ শকুন এখন পাখা মেলেছে আমাদের মাথার ওপর।

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতার প্রহর

আমি নৃশংসতা দেখেছি 

মাহমুদ দারবিশ



হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা আমি প্রত্যক্ষ করেছি 
আমি তো একটি মানচিত্রের বলি
আমি সহজ-সরল শব্দের সন্তান।

আমি দেখেছি ঝিনুকের ওড়াওড়ি
আমি তো দেখেছি বোমার মত 
শিশিরের ফোঁটা।
আমার ওপরই আমার হৃদয়ের ফটকে
যখন ওরা খিল দিলো,
অবরোধ গড়ে তুললো আর সান্ধ্য আইন জারি করলো
আমার হৃদয় পরিণত হলো সঙ্কীর্ণ কুঞ্জপথে
আমার পাঁজর পরিণত হলো পাথরে
আর সুগন্ধি রঙিন পুষ্প ফুটতে শুরু করলো
আর সুগন্ধি রঙিন পুষ্প ফুটতে শুরু করলো।

অনুবাদ- আসাদ চৌধুরী

বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

স্বর্ণযুগের হাতছানি ১

একবার কুরাইশ বংশের একজন সম্মানিত মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়ল। কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাকে এই অভিযোগ থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা যখন দেখল কোনভাবেই তাকে নিরপরাধ প্রমাণের উপায় নেই, তখন তারা একযোগে উসামাহ (রা.) কে গিয়ে ধরল। তিনি ছিলেন মহানবী (সা.) এর খুবই প্রিয়পাত্র। তাদের অনুরোধে উসামাহ (রা.) সুপারিশ করতে রাজি হলেন।

উসামাহ (রা.) রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। তাঁর কথা শোনামাত্রই রসূল (সা.) এর চেহারায় ভাবান্তর দেখা দিল। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন : 'তুমি কি আল্লাহ্‌র নির্ধারিত শাস্তির বিধানের ব্যাপারে সুপারিশ করছ?'

এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিলেন এবং বললেনঃ "হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা গোমরাহ হয়ে গিয়েছে। কারণ, কোন সম্মানী ব্যক্তি যখন চুরি করত তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার উপর শরীয়াতের শাস্তি কায়েম করত। আল্লাহ্‌র কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত কেটে দেবে।"


হযরত উমার (রা.) এর শাসনামলে বিখ্যাত 'আমুর রামদা'র দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে তিনি শপথ করেন, যতদিন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে ততদিন তিনি ঘি ও গোশত স্পর্শ করবেন না। এভাবে থাকতে থাকতে তাঁর শরীরের চামড়া শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। 
কিছুদিন পর বাজারে দুধ ও ঘি বিক্রি হতে দেখা গেল। খলীফার জনৈক ভৃত্য তাঁর জন্য দুধ ও ঘি চল্লিশ দিরহাম দ্বারা কিনে আনলেন এবং বললেন, "এখন আল্লাহ্‌ আপনার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে দিয়েছেন। বাজারে দুধ ও ঘি বিক্রির জন্য এসেছে, আমি তা কিনে নিয়ে এসেছি।" কিন্তু খলীফা যখন সেগুলোর দাম জানতে পারলেন তখন বললেন, "খুব চড়া দামে কিনেছো, দুটোই সাদকা করে দাও। আমি অপব্যয় করে খাওয়া পছন্দ করিনা।" তারপর বললেন, "জনগণের যে দুরাবস্থা হয় তা যদি আমারও না হয় তাহলে তাদের সমস্যার গুরুত্ব আমি কি করে বুঝবো।" 

তথ্যসূত্র :
ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতি - সাইয়্যেদ কুতুব 
আমরা সেই সে জাতি - আবুল আসাদ