শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

টুকরো জীবন ৭

যার জন্য ভালোবাসা দিয়ে ভেতরটা পূর্ণ করে রেখেছিলাম,
সে আমার জন্য তার ভেতরে ঘৃণার চাষ করে রেখেছে।
বোকা!
সে কি জানে না?
ঘৃণার পিঠে ঘৃণার জন্ম হয়। তারপর এ ফসল একদিন গ্রাস করবে তার নিজ সত্তাকেই! ছড়িয়ে পড়বে বহুদূর।
লোকজন পাশ কেটে যেতে গিয়ে দেখবে 
আপাদমস্তক ঘৃণা লেখা কেউ নির্বিকার হেঁটে যাচ্ছে।
কেউবা অবাক হয়ে বলবে, "এতটা ঘৃণা ধারণ করাও কি সম্ভব! জীবন টা ত খুব ছোট ছিল।"

ভালোবাসা হলো বাড়ির পাশের ঐ দোলনচাঁপা গাছটার মতো। যার ছোট্ট একতোড়া ও কতটুকু সৌরভ ছড়িয়েছে সে খবর রাখার আগেই সে ঝরে গেছে।
তবু বহুদিন পর লোকে বলবে, এখানটায় একটা গাছ ছিলো। রাতের খোলা জানালায় যার সৌরভ বলেছিল তার কথা।
তাই ভালোবাসায় মোড়ানো কথার খবর না রাখলেও চলে। সে বেঁচে থাকে সৎ মূহুর্তগুলোয়।
               
আর ঘৃণার বিষাক্ত ছায়া,
কুড়ে কুড়ে খায় হৃদয়ের উর্বর জমির
প্রতিটি ইঞ্চি।

শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮

টুকরো জীবন ৬

- দু:খগুলো যদি ছাপার অক্ষরে হতো!
তবে একটানা পড়ে শেষ করে ফেলা যেতো।
কিন্তু তেমন কালি না কি এখনো হয় নি,
যে দু:খ লেখে।

- আবীর ও বুঝি নেই?
তবে আঁকা যেতো।

- ধুর, বোকা! এর আবার আবীর কী!
দু:খ কি আর রঙিন হয়?
সাদা আর কালোয় মেশানো।

- তবে যে গন্ধ হয়!
কেমন ঝাঁঝালো

- আরে! ও তো স্বপ্ন পোড়া ঘ্রাণ।
চোখে জ্বালা ধরায় না?

- হুঁ, খুব।
রক্তিম চোখে লোনা জলের জোয়ার ডেকে আনে

- এটাই হওয়ার কথা।
এমনি ছিল
যুগ যুগ।
                 দু:খ
সবার লুকানো সমুদ্রের জোয়ারে

শনিবার, ১৬ জুন, ২০১৮

কবিতার প্রহর ২২

কৃষকের ঈদ
কাজী নজরুল ইসলাম

বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিম আসমানে,
লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন মরুর গরস্থানে।
হের ঈদগাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত- কংকাল
কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গরুর পাল?
রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু- সলিলে হায়,
বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়।
থালা, ঘটি, বাটি বাঁধা দিয়ে হের চলিয়াছে ঈদগাহে,
তীর খাওয়া বুক, ঋণে- বাঁধা- শির, লুটাতে খোদার রাহে।
জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমুর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু- পাঁজরের হাড়?
আসমান- জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে।
এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর পুটে।
কৃষকের ঈদ! ঈদগাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,
যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার।
মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু- বন্যা আসে
এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা- মসজিদে আশেপাশে।
কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?
চারিদিকে তব মুর্দার লাশ, তারি মাঝে চোখে বিঁধে
জরির পোশাকে শরীর ঢাকিয়া ধণীরা এসেছে সেথা,
এই ঈদগাহে তুমি ইমাম, তুমি কি এদেরই নেতা?
নিঙ্গাড়ি’ কোরান হাদিস ও ফেকাহ, এই মৃতদের মুখে
অমৃত কখনো দিয়াছ কি তুমি? হাত দিয়ে বল বুকে।
নামাজ পড়েছ, পড়েছ কোরান, রোজাও রেখেছ জানি,
হায় তোতাপাখি! শক্তি দিতে কি পেরেছ একটুখানি?
ফল বহিয়াছ, পাওনিক রস, হায় রে ফলের ঝুড়ি,
লক্ষ বছর ঝর্ণায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি।
আল্লা- তত্ত্ব জেনেছ কি, যিনি সর্বশক্তিমান?
শক্তি পেলো না জীবনে যে জন, সে নহে মুসলমান।
ঈমান! ঈমান! বল রাতদিন, ঈমান কি এত সোজা?
ঈমানদার হইয়া কি কেহ বহে শয়তানি বোঝা?
শোনো মিথ্যুক! এই দুনিয়ায় পুর্ণ যার ঈমান,
শক্তিধর সে টলাইতে পারে ইঙ্গিতে আসমান।
আল্লাহর নাম লইয়াছ শুধু, বোঝনিক আল্লারে।
নিজে যে অন্ধ সে কি অন্যরে আলোকে লইতে পারে?
নিজে যে স্বাধীন হইলনা সে স্বাধীনতা দেবে কাকে?
মধু দেবে সে কি মানুষে, যাহার মধু নাই মৌচাকে?
কোথা সে শক্তি- সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার
আবে- জমজম শক্তি- উৎস বাহিরায় অনিবার?
আপনি শক্তি লভেনি যে জন, হায় সে শক্তি-হীন
হয়েছে ইমাম, তাহারি খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন।
দীন কাঙ্গালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাগিদ
কোথা সে মহা- সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আসমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি,
ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনো হবে না বাসি।
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।