রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯

টুকরো জীবন ১০

আমার গল্পেরা জমা হতো চোখের তারায়
সন্ধ্যাতারার সাথে থেকে
গল্প শোনার সাথী হতে 
তোমার আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে,
সে ভাষা তোমায় শিখিয়ে দিলাম পরে,

তুমি নিজেই গল্প লিখে দিলে।

চলে যাবার গল্পেও ত
রয়ে যায় স্মৃতি!
তবে তুমি বড্ডো একপেশে খেলে গেলে!
তাই, দীর্ঘ রাত্রির বুক চিড়ে
নির্দয় মঞ্চস্থ হলো,
পৃথিবীর আরেকটি পুরনো গল্প৷

খেরোখাতার ছেঁড়া পাতায় তাই এখন
গল্প বলিয়ে এক মেয়ের,
গল্প জমা হয়।

যে ভাষা বড়ো দুর্বোধ্য।। 

শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

দরজার ওপাশে

অন্ধকারের আলো হিসেবে
এখনো শেষ বাতিটা জ্বলছে।
যদিও বহু আগেই নিভে গেছে
সূর্যালোকিত স্বচ্ছ জলে তার টিমটিমে ছায়া।

আধেক শহর ঘুমিয়ে
সামনের রেলিঙটায় দু'একটা
কাক এসে নেমে যায়
দূরে ছাতা হাতে অশীতিপর এক বৃদ্ধের কায়া!

পরের ছত্রে হয়তো
নিশ্চিত করাঘাতে কাঁপবে গোটা বাড়িটা।

ভালো থাকার কী এক আজন্ম লালসায়,
একটা জনম কেটে গেল
ঘোর অনিশ্চয়তায়।
আজও তাই শেষপ্রহরের করাঘাতে
দ্বিধান্বিত মানব মন
শেষ আলোটা হাতড়ে বেড়ায়,
নিঃসীম শূন্যতায়।

প্রতিশব্দের গল্প

আজকাল শব্দেরা,

জোনাকির মতো জ্বলে উঠে মাঝে মাঝে
রাত্রি গভীর হওয়ার অনেক আগেই,
তারপর ঢেকে যায়
অন্ধকার মৌন মিছিলে।

অথবা, দূর কোন নদীর বুক থেকে
ভেসে আসে এক চিলতে বাতাস হয়ে,
দোলা দেয় ধানের বাড়ন্ত শীষে
নীরবে, নিভৃতে।

একেকদিন বিকেলে ম্লান হয়ে যায়
যে আলো,
দিগন্তরখার ওপারে
আমার শব্দেরা হারায় কখনো তাদের সাথে। 

আর এভাবেই আমার যাপিত প্রতিটি দিন
নৈশব্দের ভারে হয়ে উঠে শব্দহীন।।। 

          

অনভ্যস্ত আত্মকথন ১

ছোটকাল থেকেই আমি বেশ পাকনা বাচ্চা ছিলাম। আব্বুর কাছে শুনেছি যখন আমার বয়স ৩ তখন আম পাতা জোড়া জোড়া টাইপ সব ছড়াই না কি আমার মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল! আমি বেশ গোঁ ধরলাম এই বইয়ের ছড়া আর পড়বো না। তখন আব্বু তাঁর একাদশের বই এর প্রিয় দুটি কবিতা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল।
" একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
     চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।"
আর 
" এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।"
তারপর থেকে কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো, 'বাবু, একটা ছড়া বলো তো?' আমি না কি এ কবিতা দুটি শুনিয়ে দিতে খুব মজা পেতাম।  

সবচেয়ে প্রিয় উপহার ছিল ফুল আর বই। এ দুটোর প্রতি আমার টান বরাবরের। ফুল সম্পর্কিত একটা ঘটনা স্মরন করতে গিয়ে আম্মুর চোখ এখনো ভিজে যায়। সেবার ঈদের আগের রাত। আমি সিক্স কি সেভেনে পড়ি। আমার জুতা-কাপড় কিছুই কেনা হয়নি। পুরো মার্কেট ঘুরে যখন খালি হাতে বের হলাম তখন রাত ১১টা। কেনো কিনতে পারলাম না আমার ছোট্ট মাথায় তখন সেটা ঢুকে নি। মার্কেটের বাইরে ফুল বিক্রি হচ্ছিল। আব্বু জিজ্ঞেস করলো, নিবি? আমি আগেই দৌড়। ১০টা স্টিক তখন ২০ টাকায় কেনা হয়েছিল। তাই পেয়ে আমি মহাখুশি। নিজে থেকেই নাকি বললাম আমার জুতা, জামা কিচ্ছু লাগবে না। চলো বাসায়। এগুলা দিয়ে সাজাবো। পরে অবশ্য অনেক রাতে অন্য এক জায়গা থেকে কেনা হয়েছিল ওসব।
আর বইয়ের বেলায় বলতে হয় কাগজ পেলেই খুলে পড়ার অভ্যেস ছিল। একারনে ছোটবেলায় একবার ধরা ও খেয়েছি। অন্যের গোপন জিনিস পড়ে ফেলার দায়ে। যদিও তা অনিচ্ছাকৃত ছিল। পড়ার অভ্যেস এত মারাত্মক ছিল যে ফুটপাতের প্রেমের বই থেকে হ্যারি-পটার, শার্লক সবই পড়েছিলাম স্কুল লেভেলেই। সৃষ্টিকর্তা ও আমার প্রতি প্রসন্ন ছিলেন বোধহয়। যে কারনে বহু প্রতিযোগিতা জিতে পেয়েছিলাম অসংখ্য বই।

আমি সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম দু'বার। সেই সাড়ে চারে আর এই ছাব্বিশে। দু বারেই সমুদ্রের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। সাড়ে চারে আম্মুর হাত থেকে ছুটে গিয়েছিলাম আর ছাব্বিশে বেখেয়ালে ভেসে গিয়েছিলাম। কে জানে আমার নামের সাথে মিল আছে দেখেই কি না ঢেউ আমাকে এত টানে...

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

টুকরো জীবন ৯

কোনো দিন মধ্যদুপুরে হঠাৎ ফোনের রিংটোন
বেজে উঠবে না আর!
'ঔষধ খেয়েছি কি না?'
তা জেনে যাপিত জীবন
কতটুকু আর ভরে!
জীবনের তৃষ্ণা তাই ফুরিয়ে যায়,
ঔষধের তৃষ্ণা বাড়ায়।

পার্কের সেই তালগাছটা এখন
সন্ধ্যার অন্ধকারে আরো বড় দেখা যায়।
সে কি জানে?
কোনও এককালে তার হাওয়ায় ভাসা মানব হৃদয়,
আজ সময়ের বেরহম স্রোতে ভেসে যায়।
এ মানব জনম,
বড় শূন্য হাতে ফিরায়!

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কবিতার প্রহর ২৩

আমি আর আসবো না বলে

আল মাহমুদ


আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর
চামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়া
যেন সাদা স্বপ্নের চাদর
বিছিয়েছে পৃথিবীতে।
কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে?
courtesy: instagram/urmee_s.a
যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশে
লিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানা
সমস্ত কিছুর।

প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না।
পাখি, আমি আসবো না।
নদী আমি আসবো না।
নারী, আর আসবো না, বোন।
আর আসবো না বলে মিছিলের প্রথম পতাকা
তুলে নিই হাতে।
আর আসবো না বলে
সংগঠিত করে তুলি মানুষের ভিতরে মানুষ।

কথার ভেতরে কথা গেঁথে দেওয়া, কেন?
আসবো না বলেই।
বুকের মধ্যে বুক ধরে রাখা, কেন?
আর আসবো না বলেই।
আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।

প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর?



মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

টুকরো জীবন ৮

একবার হঠাত মাঝরাত্তিরে তুমি ঘুম থেকে জাগিয়ে বলেছিলে,
'আমার তোমায় কিছু দিতে ইচ্ছে করছে!
আছে তোমার কোন চাওয়া?'
জবাবে বলেছিলাম...
Image : Hourglass
Courtesy: Sarah Dickenson
'আমায় একটা বালুঘড়ি দিও।
ঝরে পড়া বালির বুক চিড়ে যে সময় গড়ায়
সেখানে আমি আটকে রাখবো এ মূহুর্তটাকে।"

তারপর এমন কত মাঝরাত্তি গড়ালো !
তুমি হয়তো ভাবতে
ভুলে যাওয়ার আরেক নাম এগিয়ে যাওয়া
তাই ভুলে যাওয়ার আনন্দস্রোত ভাসিয়ে নিলো
বাসি হওয়া সব মূহুর্ত।

মহাকালের অবধারিত বয়ে যাওয়া শেষে,
বালুঘড়ির বুক জুড়ে নিয়েছে এখন শূন্যতা।
পাশ ফিরলেই কী ভীষণ মিথ্যেয় গড়া
আমাদের চারপাশ!
সময়ের আগে তাই ভেঙে গেলো
আমাদের 'ঠুনকো সময়'।