বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

আলোর পথে সংগ্রাম

সময়টা ছিল ২০০২ সাল যখন আমার বয়স চৌদ্দ। প্রায় ১১ বছর ইউরোপে কাটানোর পর আমি এবং আমার পরিবার নিজ দেশে ফিরে আসি। আলহামদুলিল্লাহ, যেটি ছিল একটি মুসলিম দেশ।

আমি!
আমার পোশাক ছিল টি-শার্ট, জিন্স আর চুল থাকত অনাবৃত। আমি খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলাম এবং প্রচুর খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। এর বাইরে আমি ছিলাম একজন কিশোরী। সর্বোপরি, আমি ছিলাম নিতান্তই একজন শিশু।

ছেলেরা 
আমি মুসলিম ছেলে মেয়েদের সাথে একত্রে একটি স্কুলে পড়তাম। জনপ্রিয়তার কারণে প্রত্যেকেই আমাকে চিনত। ছেলেদের কাছে আমি ছিলাম 'কুল'। তারা আমাকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে চাইত। আমার সাথে বাইরে  যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করত। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে লালিত হওয়ার কারণেই তাদের কাছে আমি ছিলাম 'কুল'। যাই হোক, তারা এটা জানত না যে, আমি ছিলাম তাদের চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি ওরকম মেয়ে ছিলাম না যারা ছেলেদের সাথে বাইরে বেড়াতে যেত। আমি তাদের ভয় পেতাম। তাছাড়া আমি ছিলাম মুসলিম। ইসলাম ধর্মের একজন অনুসারী। আমি ছিলাম অত্যন্ত লাজুক একজন, যে স্রষ্টার প্রতি আরও মনোযোগী হতে চাইত, ধর্মের ব্যাপারে জানত। বিশেষত বিপরীত লিঙ্গের মানুষদের সাথে মিশতে অপছন্দ করত। আমি বুঝতে পারলাম যে আমার বাহ্যিক অবস্থায় আমার ভেতরের চিন্তার প্রতিফলন ঘটছে না যা আমি সত্যিকার অর্থে লালন করি।

হিজাব 
 আমি আমার বন্ধুদের বলিনি যেদিন প্রথম হিজাব পড়লাম। আমার পিতা-মাতা বলল যে, এটা সুন্দর। আমার মনে পড়ছে আমি লম্বা একটি জ্যাকেট আর মাথায় স্কার্ফ পরে কম্পিত হৃদয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম।
আমি ঐ দিনটির কথা কখনও ভুলবনা, আমার তিনজন বন্ধুর একজন আমাকে হিজাব পরিহিত অবস্থায় দেখে হাসল এবং বলল যখন আমি স্কুলে আসব তখন আমার উচিত এটা খুলে ফেলা এবং স্কুল থেকে যাওয়ার সময় আবার পরা যাতে কেউ লক্ষ্য না করে। তখন একটা ছেলে তা শুনতে পেয়ে আমায় বলল, 'ওর কথা শুনোনা, ও খারাপ।' ঐদিন আমি ভগ্নহৃদয়ে বাড়ি ফিরলাম। কম্পিউটারের সামনে বসে অনবরত কাঁদতে লাগলাম। যখন আমি কাঁদছিলাম তখন আমার মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কেন কাঁদছি। ছেলেরা আমার হিজাব সম্পর্কে যা বলেছে আমি তা বললাম। "তারা কেন তোমাকে এসব বললো? ", তিনি জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, "তারা বলছিল আমি ছিলাম পরীর মত দেখতে।" আমার মা হাসলেন এবং আমি আরও হতাশ হয়ে পড়লাম।

 হিজাবের পর
 হিজাব পরায় আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। এটা আমাকে ধীরে ধীরে আরও ভাল হতে সাহায্য করল। আমি ভেবেছিলাম লোকেরা আমার সমালোচনা করবে কিন্তু তারা আমায় আরও বেশী সম্মান করতে লাগল। আমি ভাবলাম আমাকে হয়ত বাজে দেখাবে কিন্তু এটি আমাকে আরও নম্র আর উজ্জ্বল করল। এটাই হচ্ছে সৌন্দর্যের সর্বোত্তম রূপ।  হিজাবেই সৌন্দর্য এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ আমাদের তা পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি।

আমার তথাকথিত বন্ধুরা 
আমার ক্লাসের মেয়েরা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলত যা আমি বুঝতাম না। শুধুমাত্র তিনজন মেয়ে ইংরেজির পাশাপাশি আরবি বলত। ফলে, এই তিনজনই ছিল আমার বন্ধু হওয়ার মত। যে তিনজন মেয়ের সাথে আমি চলতাম তারা কেউই হিজাব করত না; তাদের পোশাক ছিল আমার চেয়েও আঁটসাঁট, শুকনো চুল উড়ত প্রায় প্রতিদিনই। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল গান, ছেলে এবং আরও বাজে কিছু যা আমি আগে জানতাম না। তারা সচরাচর আমাকে এড়িয়ে চলত। আমি তাদের ভয় পেতাম যদিও শুধু তারাই ছিল আমার বন্ধু যাদের সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারতাম।

আত্মমর্যাদা
ঐ মেয়েদের সাথে থেকে আমার আত্মমর্যাদাবোধ কমতে থাকল। ভেতরে ভেতরে আমি নিজেকে ঘৃণা করতে লাগলাম। আত্মমর্যাদার মাপকাঠিতে আমারটা ছিল শূন্যের কোটায়। আমার নিজেকে পরাজিত মনে হল। আমি মার্জিত পোশাক আর সাজসজ্জায় নিজেকে মানিয়ে নিতে চাইলাম। আমার তথাকথিত বন্ধুরা আমাকে ছেলেদের সাথে সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করত। কিন্তু আমি ছিলাম ধৈর্যশীল।

স্কুলজীবন শেষে
স্কুলজীবন শেষে আমি আরও ভাল মুসলিমাহ হওয়ার চেষ্টা করলাম। কৃত্তিম সাজসজ্জা পরিত্যাগ করলাম। আমার সমস্ত মনোযোগ দিলাম সঠিক কাজ করায়। 'ইসলাম' বিষয়ে আরও গভীরভাবে জানার চেষ্টা করলাম। ধীরে, খুব ধীরে আমি আত্মিক দিক থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পৌঁছানোর চেষ্টা করলাম- আলহামদুলিল্লাহ্‌।

বিশ্ববিদ্যালয়
আমার বন্ধুরা পড়া ছেড়ে দিল। আমি পড়া চালিয়ে গেলাম এবং এখন আমি আমার এম. এ. সম্পন্ন করতে আগ্রহী। আমার চারবছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি কোন কৃত্তিম সাজসজ্জা করতাম না। আমার হিজাব করার লক্ষ্য ছিল সবসময় বিনয়ী পোশাক পরা যা ছিল বর্ণহীন এবং অনাকর্ষণীয় এবং যা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য। আমার যে সকল বন্ধু ছিল তারা সকলেই আল্লাহ্‌কে ভয় করত; তারা ছিল ভাল মুসলিমাহ। নিজেকে উন্নত করা আর ভাল কাজের ব্যাপারে তারা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিত, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আমার বোনদের প্রতি
ওয়াল্লাহি, আমার দ্বীনি বোনেরা, হিজাব হচ্ছে নূর (আলো)। পুরুষদের আপনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে দেবেন না। আপনার মূল্য অনেক। নিজেকে আবৃত করার মাধ্যমে একে সুরক্ষিত রাখুন। শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য হিজাব করুন যাতে করে তিনি আপনার উপর সন্তুষ্ট হন। তিনি  এমন কিছু করতে বলেননা যাতে আমাদের অকল্যাণ হয় এবং একজন গর্বিত হিজাবি মুসলিমাহ হিসেবে আমি বলতে চাই যে এর উপকারীতা অনেক। 
অনেকেই হিজাব করেননা এই ভেবে যে লোকে কী বলবে। আমি তাদের বলতে চাই যে, তারা কি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় যে, আল্লাহ্‌ কী বলবেন? যখন কেউ হিজাব না করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন প্রকৃতপক্ষে সে শয়তানেরই অনুসরণ করে। আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা করে সে শয়তানকে খুশি করে।
কে আপনার আনুগত্য পাওয়ার দাবী রাখে? তিনি কি আল্লাহ্‌ নন  যিনি সবকিছুতে আপনার জন্য জান্নাত চান।

দু'আ
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সকলকে সঠিক পথের উপর রাখেন। আল্লাহ্‌ যেন প্রত্যেকটি মেয়েকে হিজাব পরার শক্তি দেন। তিনি যেন সকল মুসলিমাহর অন্তরকে নূরের আলোয় আলোকিত করেন। প্রত্যেকের অন্তরে হিজাবের জন্যে ভালবাসা তৈরী করেন এবং সকলকে তাঁর আনুগত্যের উপর দৃঢ় রাখেন।  
  
মূল লেখা : Struggle Towards Light
Collected from sisters' blog I Got It Covered.


মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩

নৈঃশব্দ্যের ট্রেন

ইদানীং শব্দেরা খুব বেশী তাড়া করে,
আমি চাই নৈঃশব্দ্যের শহর।
ব্যাঙের একটানা ডাকে,
স্বপ্নগুলোর ডানা ঝাপটানোও যেন থেমে গেছে,
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বালুর 'পর।
এই বুঝি বিস্ফোরণ ঘটলো শব্দের।
তবু অপেক্ষায় থাকি,
মধ্যরাতে নৈঃশব্দ্যের ট্রেন ধরবো বলে,
ছেড়ে যাবো গন্তব্য,
দূর-বহুদূর।
অপেক্ষার প্রহর শেষে, একি!
মাঝরাতেও শুনি কিছু শেয়াল আর কুকুরের নগ্ন চিৎকার,
ছিঁড়ে খায় আমার শব্দহীন সময়গুলো।।

রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

জীবন ঘড়ি

সাড়ে নয়টায় পরীক্ষা। ইতোমধ্যে ৯.২০ হয়ে গেছে। বার বার হাতঘড়িটা দেখছি। হলের গেট দিয়ে দ্রুত বের হয়েই রিকশা নিলাম। যদিও ৫-৬ মিনিটের হাঁটা রাস্তা। তবুও সেমিস্টার ফাইনাল বলে কথা। ব্যাটারিচালিত রিকশায় হয়ত ২-৩ মিনিটেই পৌঁছে যাব।
রিকশায় উঠেই নোটগুলো ব্যাগ থেকে বের করলাম। উদ্দেশ্য শেষ কয়টা মিনিটও কাজে লাগানোর। বার বার হাতঘড়িটা দেখছি।  হঠাৎ খেয়াল করলাম রিকশায় গান বাজছে। টেনশনে হয়ত এতক্ষণ শুনিনি। গান শোনা ছেড়েছি বেশিদিন হয়নি, তারপরও এ গান কখনো শুনেছি বলে মনে হয়না। খেয়াল করে দেখলাম গানের কথাগুলো অনেকটা এমন 'জীবন ঘড়িতে দেখছনি মন, বাজে এখন কয়টা'। কেমন জানি অদ্ভুত একটা মিল পেলাম যেখানে আমার দৃষ্টি হাতঘড়িটায় নিবদ্ধ।

আসলেই তো জীবন ঘড়িতে এখন কয়টা বাজে? এমনও তো হতে পারে যে দশ মিনিটের জন্য আমার এত তাড়াহুড়া সে দশমিনিট সময়ও আমার জীবন ঘড়িতে নেই। অথচ সেদিকে তো কোন খেয়ালই নেই। দুনিয়ার সামান্য এক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির অন্ত নেই। সত্যিই যদি আমার ঘড়িতে সময় ফুরিয়ে আসে, তাহলে কি হবে? মহাপরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার কথা চিন্তারও যে ফুরসৎ হয়নি আমার। কি জমা দেব আমি সেই কঠিন মুহূর্তে? সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারকের সামনে? আমার পুরো খাতাই যে খালি পরে রইলো। কি অজুহাত দেব আমি আমার এত বছর সময়ের?

রিকশাওয়ালা মামার ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। দেখি ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে পড়েছি। ৩ মিনিটেই চিন্তার গভীরে চলে গিয়েছিলাম। ভাড়া মিটিয়ে নামতেই দেখি ৯.২৫ প্রায়। আরে, আমার না পরীক্ষা।

আবার দৌড়,
দৌড় এ নশ্বর পৃথিবীর পেছনে......


শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

কষ্টগুলোর জীবনকাল

আল্লাহ্‌ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে আমাদের বলে দিয়েছেন যে, প্রত্যেকটি জিনিসের জন্যই তিনি একটি সময়কাল নির্ধারণ করে রেখেছেন। এর মাঝে আমাদের প্রতিকূলতা ও সংগ্রামও অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকটিরই রয়েছে সূচনা ও সমাপ্তি; আছে একটি নির্ধারিত সময়কাল। জীবনের সকল পরিস্থিতিরই একটি নির্দিষ্ট সময় পর অবসান ঘটে অথবা পরিবর্তন ঘটে।

আমার জীবনের বেশকিছু পর্যায়কাল রয়েছে যখন এ আয়াতটি আমাকে গভীর প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ এই আয়াতটির রয়েছে সুগভীর তাৎপর্য :

"তুমি তোমার রবের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করো, তুমি (অবশ্যই) আমার চোখের সামনে আছো।"
সূরা আত-তূর :৪৮

শেখার আছে অনেক কিছুই
 ১. আল্লাহ্‌ আপনার অবস্থার পরিবর্তন করবেন। শুধু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আর এই কষ্টের মুহূর্তটা পার করে যেতে হবে। এটা কখনও চিরস্থায়ী নয় এবং আপনার প্রভু এর দায়িত্বে আছেন (আপনার রবের সিদ্ধান্ত)।

২. "তুমি (অবশ্যই) আমার চোখের সামনে আছো।" এমনকি কষ্টের সময়টা পার করার সময়ও তাঁর চোখের সামনে। তিনি আমাদের খেয়াল রাখছেন। কী পরম শান্তি!

৩. আপনি শুধু এ কারণেই ধৈর্য ধারণ করবেন না যে, (ক) আল্লাহ্‌র নির্দেশ আপনার অবস্থার নিয়ন্ত্রণ করছে বরং এ কারণেও যে, (খ) তিনি আপনাকে দেখছেন। তিনি হচ্ছেন অভিভাবক, এমনকি আমাদের কষ্টের সময়টাতেও। প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে আপনি তাঁর দৃষ্টি ও সুরক্ষার মধ্যে আছেন এবং আপনি ধৈর্য ধারণে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতেও আপনার ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতাটা, আপনার প্রতি আপনার রবের বিশাল এক অনুগ্রহ ও উপহার।

স্রষ্টা তাঁর সীমাহীন জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের পরিস্থিতি দেখছেন এবং আমাদের ধৈর্য ধারণের সামর্থ্যটিও তাঁর নিয়ন্ত্রণে।

মূল লেখা : ইয়াসমিন মোগাহেদ
The Lifetime Of Hardship

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমার শৈশবের নদী

ছোটবেলার ঈদগুলো যখন আসত তখন ঈদের আনন্দের সাথে বাড়তি একটা আনন্দও নিয়ে আসত। আর তা হল বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। তখন মনে হত সারা বছরের সব খুশি বুঝি এখনই। সবসময় কেন এমন থাকেনা! এ ক'টা দিন যেন চোখের পলকেই চলে যায়।

বাড়িতে যাওয়ার পরপরই আমাদের তীব্র আকর্ষণ থাকত নানাবাড়ি যাওয়ার প্রতি। তখন ঈদ হত শীতকালে। সেখানে শীতের সকালের আমেজই আলাদা ছিল। কিন্তু, আমার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল দিন শেষের ক্ষণটা, যখন আমরা সবাই মিলে নদীর পারে যেতাম। দু'মিনিটের হাঁটাপথ শেষে এই বিশালতা যেন অপার্থিব এক প্রাপ্তি। আমার শৈশবের নদী সেই 'তিতাস'।

দিনের শেষ আলোটা নিভে যাওয়ার আগেই যখন সবাই চলে আসতে চাইত, আমার তখনও মনে হত আমি কিছুই দেখিনি।অতৃপ্ত আত্মা আমার।
ছবি : ওয়েব
কিছুক্ষণ আগে সাইমুম.নেট এ অনেক অনেক সুন্দর কিছু কবিতার মাঝে আল মাহমুদ এর 'তিতাস' কবিতাটি শুনলাম, মনে হল আমার মনের কথাগুলোই যেন কবির ভাষায় প্রান খুঁজে পেয়েছে।

এ আমার শৈশবের নদী, এই জলের প্রহার
সারাদিন তীর ভাঙে, পাক খায়, ঘোলা স্রোত টানে
যৌবনের প্রতীকের মত অসংখ্য নৌকার পালে
গতির প্রবাহ হানে।
--------------------------------------------
আমি তার খুঁজিনি কিছুই,
কিছুই খুঁজিনি আমি। যতবার এসেছি এ তীরে,
নীরব তৃপ্তির জন্য আনমনে বসে থেকে ঘাসে,
নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণ ভরেছি এ বুক।
একটি কাশের ফুল তারপর আঙুলে আমার
ছিঁড়ে নিয়ে এই পথে হেঁটে চলে গেছি শহরের
শেষ প্রান্তে যেখানে আমার ঘর, নরম বিছানা,
সেখানে রেখেছি দেহ। অবসাদে ঘুম নেমে এলে,
আবার দেখেছি সেই ঝিকিমিকি শবরী তিতাস,
কী গভীর জলধারা ছড়াল সে হৃদয়ে আমার।।


ছবি : ওয়েব
এখন আর কোনকিছুর জন্যই সময় হয়ে উঠেনা। যান্ত্রিকতার চাপে পিষ্ট হয়ে গেছি। শুনেছি সেই নদীও আর আগের মত নেই। আমার হৃদয়ে তবু জাগ্রত হয়ে আছে তার সেই অনন্তযৌবনা রূপ।