বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

কিছু ছন্নছাড়া সময়ের গল্প ৩

প্রিয় কিছু পঙক্তিমালা, যার মাঝে আমি স্বরূপ খুঁজে পাই

১.  কিছু হৃদয় একে অপরকে বুঝতে পারে এমনকি নীরব থেকেও।

২. ঊষার পূর্বলগ্নটা আমার বরাবরই পছন্দের। কারণ আমার চারপাশে কেউ থাকেনা 'আমি কি হতে পারতাম' সেটা বলার জন্য। 'আমি কি হতে পেরেছি' সেটা মনে করা তখন আমার জন্য সহজ হয়ে যায়।

৩. চারপাশে অনেকেই আছে যারা সব শুনেও আপনাকে বুঝতে পারে না। আবার এমনও মানুষ আছে যারা আপনাকে অনায়াসেই বুঝে নেয়, এমনকি আপনি নীরব থাকলেও।

 ৪. অসুখী হওয়ার পেছনে যদি একটাই কারণ থাকে, তবে সেটি হচ্ছে কোন কিছু হওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত আশা পোষণ করা।

৫. তিনি জানেন যে, প্রত্যেকটি ভুল দরজার পেছনে একটি করে খাদ আছে। যদি আমরা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করি তবে তাতে পড়ে যাব। দয়াময় প্রভু তাই আমাদের জন্য দরজাগুলো বন্ধ করে দেন।

 -ইয়াসমিন মোগাহেদ

৬.
একজন মুসলমান হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ইসলাম আমার হৃদয়ের স্পন্দন, আমার শক্তি, আমার শিরায় প্রবাহিত রক্ত। ইসলাম আমার জীবন যা এত সুন্দর ও চমৎকার! ইসলাম ছাড়া আমি কিছুই না। যদি আল্লাহ্‌ কখনো তাঁর দয়ার দৃষ্টি আমার থেকে সরিয়ে নেন তাহলে আমার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব না।

-আমিনাহ আসসিলমি 

কিছু ছন্নছাড়া সময়ের গল্প ২

মন খারাপ থাকলে মাঝে মাঝে কিছু সুন্দর কবিতা ভালো খোরাক যোগায়। তেমনই কিছু কবিতা পড়লাম, আর ভালো লাগা কয়েকটি লাইন...

১.
 দিন রাত্রির এই সংগ্রাম, এই পরাজয় ভীতি,
এই পশ্চাৎ অপসরণের রীতি
থামুক নিমেষ লাগি...
মানুষের খর সূর্য দীপ্তি আবার উঠুক জাগি...
প্রগাঢ় রক্ত পাপড়ি খোলার মত
একটি নিমেষ দাও মোরে অন্তত।

-ফররুখ আহমদ


২.
যে শাদা দেখি ঐ বকের পাখাতে
সে রঙ চায় ওকি আকাশে মাখাতে।

বোঝে না পাখি সে কি নীলের শিথানে
কি ফুল ফুটে আছে আকাশ-বিতানে?
আলেয়া ঝিকিমিকি সন্ধ্যাতারাতে।

-আল মাহমুদ


৩.
জড়পিণ্ড হে নিঃস্ব সভ্যতা!
তুমি কার দাস?
অথবা তোমারি দাস কোন পশুদল!
মানুষের কী নিকৃষ্ট স্তর!
যার অত্যাচারে আজ প্রশান্তি; মাটির ঘরঃ জীবন্ত কবর
মুখ গুঁজে প'ড়ে আছে ধরণীর 'পর।
-------------------------------------------

হে জড় সভ্যতা!
মৃত - সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ!
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ;
তারপর আসিলে সময় বিশ্বময়
তোমার শৃঙ্খলগত মাংসপিন্ডে পদাঘাত হানি'
নিয়ে যাব জাহান্নামের দ্বার-প্রান্তে টানি' ;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু- দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও তুমি ধ্বংস হও।।


 -ফররুখ আহমদ

 ৪.
আমার কৈশোর আমাকে আর্দ্র করে রেখেছিল।
আর আমার চোখ ছিল গ্লাসে ভিজানো
ইছবগুলের দানার মতো জলভরা।

 -আল মাহমুদ

 ৫.
হে প্রেমময়! আমাদের আরো প্রেম দান কর
দাঁতাল জালিমের গ্রাস থেকে আমাদের রক্ষা কর
আমরা আমাদের খানা রেখে দিলাম দূরে, তোমার নির্দেশ
এখন পৃথিবীর সমস্ত সবুজ অঞ্চলে আত্মশুদ্ধির দিন
নড়ে উঠার মত সাহসের মিসাইল আমাদের বুকে দান কর।
ক্রুদ্ধ শকুন এখন পাখা মেলেছে আমাদের মাথার উপর।

-গোলাম মোহাম্মদ

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৩

একটি গল্প ও কিছু কথা

গল্পটা পড়েছিলাম ছোটবেলায়, একটা আই. কিউ টেস্টের প্রশ্ন হিসেবে। কিন্তু, এর মাঝে লুকিয়ে থাকা শিক্ষাটা এত চমৎকারভাবে ভেবে দেখিনি। কয়েকদিন আগে শাইখ যাহির মাহমুদ এর পেইজে এটি পড়ার পর মনে হল, আসলেই স্বচ্ছ অন্তর্দৃষ্টির মানুষেরা সবকিছুর লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য্যটাও খুঁজে পান।



 এক বৃদ্ধ পিতা মারা যাওয়ার পূর্বে তার তিন ছেলের জন্য সম্পত্তি হিসেবে ১৭ টি উট রেখে যান। সম্পত্তি বণ্টনের ব্যাপারে তিনি তার শেষ ইচ্ছা উইলে লিখে যান। তার মৃত্যুর পর সন্তানরা যখন উইলটি খুলল, তখন দেখল তাতে লিখা রয়েছে, বড় ছেলে পাবে সম্পত্তির অর্ধেক; অর্থাৎ ১৭ টি উটের অর্ধেক। মেজ ছেলে পাবে এক তৃতীয়াংশ আর ছোট ছেলে পাবে নয় ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি। তিন ছেলেই পড়ল মহাবিপাকে। বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ভাগ করতে গেলে তো উটগুলি কাটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি আরম্ভ হয়ে গেল। পরে তারা তাদের বাবার এক বন্ধুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী লোক। সবশুনে তিনি বললেন, আমার নিকট একটি উট রয়েছে। এটি সহ তোমাদের এখন ১৮ টি উট হল।
তাহলে ১৮ এর অর্ধেক হচ্ছে ৯, তাই বড় ছেলে পাচ্ছে ৯ টি।
এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে ৬, তাই মেজ ছেলে পাচ্ছে ৬ টি।
আর এক নবমাংশ হচ্ছে ২, ছোট ছেলের ভাগে তাই ২ টি।
এখন, ৯ + ৬ + ২ = ১৭; বাকী যে উটটি রয়েছে সেটি আমার, এবং আমি তা ফেরত নিচ্ছি।  

শিক্ষা (শাইখ যাহির মাহমুদ এর পেইজ থেকে অনুবাদকৃত) :
কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমরা যদি আপোষ করতে চাই তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য এবং আচরণ হওয়া উচিত ১৮ নং উটটি খুঁজে বের করার মত অর্থাৎ, সকলের মতের ভিত্তিতে একটি ঐক্যে পৌঁছানো। যখন  মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে, তখন বিরোধ নিষ্পত্তির একটা উপায়ও বের হবে। যদিও কখনও কখনও এটি বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তা সত্ত্বেও, সমাধানে পৌঁছানোর প্রথম  ধাপটি হল এটা মেনে নেয়া যে, অবশ্যই প্রত্যেক সমস্যারই একটি সমাধান রয়েছে। যদি আমরা আগেই ভেবে নেই যে,  এর কোন সমাধান সম্ভব না, তাহলে আমরা কখনই  তাতে পৌঁছাতে পারবনা।
 

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৩

হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখা

যখন আপনি কোন খারাপ পরিস্থিতি বা কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হন, তখন সেগুলোকে ভেবে দেখার ব্যাপারে শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হউন।  চলমান পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে দেখতে গেলে আপাতদৃষ্টিতে ঠিক মনে হলেও, তা হবে একটা বড় প্রবঞ্চনা। যা আপনাকে ভুলপথে নিয়ে যাবে এবং একসময় ধ্বংসের কারণ হবে।


চোখ বন্ধ করুন। অতঃপর সত্য উপলব্ধির ব্যাপারে হৃদয়কে চালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চান। হৃদয়, শুধুমাত্র হৃদয় দিয়েই সত্যের দর্শন পাওয়া সম্ভব। এটা শুধুমাত্র হৃদয়ের চোখ, যা দিয়ে আপনি সুখ, দুঃখ কিংবা ভয়ের দ্বারা তৈরি ভ্রান্তির মাঝেও পরিষ্কার দেখতে পাবেন। কেবলমাত্র অন্তর্দৃষ্টির দ্বারাই সৃষ্টি এবং সৃষ্ট অবস্থার ভেতরটা দেখা সম্ভব। এটা সেই অন্তর্দৃষ্টি যা আপনাকে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র উপস্থিতি টের পাইয়ে দিবে।
তবে, সতর্ক থাকবেন অন্তর্দৃষ্টির স্বচ্ছতার ব্যাপারে, যার উপর নির্ভর করে আপনার সবকিছু দেখা।


মূল লেখা : ইয়াসমিন মোগাহেদ
The Lens Of the Heart

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৩

আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল

হলে থাকার একটা সুবিধা আছে। বিভিন্ন রকমের মানুষের বৈচিত্র্য সহজেই চোখে পড়ে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একজন সামনে দিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে গেল (যদিও একটু আগেই তাকে দেখলাম ফোনে তুমুল ঝগড়ায় ব্যস্ত),
"আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল,
শুধাইল না তো কেহ"
কিছুদিন আগেও এটা আমার বেশ পছন্দের গান ছিল। এখন মনে হয় এসব গানে মানুষ কি খুঁজে বেড়ায়? নিজ হাতে কষ্ট কপচানো ছাড়া তো আমি কিছুই দেখিনা। সত্যি কথা বলতে কি, দুনিয়ার মানুষের কাছে সুখ আর অনুগ্রহ খুঁজলে তো অবস্থাটা এমনি হওয়ার কথা। তবু আমরা মানুষেরা ব্যাকুল হয়ে ছুটতে থাকি দুনিয়ার পেছনে। কোন একটা সমস্যায় পড়লেই চিন্তায় পড়ে যাই, কার কাছে গেলে এটার সমাধান হতে পারে? প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এলেই দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে বাসভর্তি মানুষ সিলেট এ আসে মাজারের উদ্দেশ্যে। মোমবাতি বা আগরবাতি কিনে তারা দিনের বেলাতেও মাজারের দেয়ালে লাগিয়ে দিয়ে যায় তাও যথেষ্ট ভাবগাম্ভীর্যের সাথে। অথচ, এত কাছে রয়েছেন আমাদের রব, যাকে ডাকতে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কোন আড়ম্বরের দরকার পড়েনা, যিনি সর্বশ্রোতা, যিনি হৃদয়ের গোপন প্রকোষ্ঠের খবর সম্পর্কেও অবহিত, সেই মহান সৃষ্টিকর্তার কথাই আমরা ভুলে যাই! তাই হয়ত প্রকৃত শান্তি আমরা খুঁজে পাইনা।

"Verily, in the remembrance of Allaah do hearts find rest."
 Al-Quraan (13;28)
মাঝে মাঝে 'হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল' হই না যে তা কিন্তু না। তবে, হৃদয়ের ব্যাকুলতা স্রষ্টার কাছে ব্যক্ত করার মাঝেই রয়েছে অপার্থিব এক আনন্দ, যা হয়ত কবিতা বা গানের ভাষায় ধরা পড়ার নয়।

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

কিছু ছন্নছাড়া সময়ের গল্প

অনেকক্ষণ ধরেই একা একা বিরক্ত হচ্ছিলাম। অনলাইনে আর কত পড়ব? মনে হচ্ছে থিসিস ই কুইট করে ফেলি। শেষমেশ পিসিই অফ করে দিলাম। কম্পিউটারের মনিটরে পড়া আর কঠিন মলাটের শুষ্ক বই হাতে নিয়ে পড়ার মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। বইয়ের চেনা-পরিচিত গন্ধটাও যেন পড়ার অনুভূতিটাকে আরও গভীর করে তোলে। র‍্যান্ডমলি কবিতা পড়তে লাগলাম। বই হাতে পেয়ে পড়ার পুরনো অনুভূতিটা ফিরে এলো। কিছু কবিতার লাইন পড়ে অদ্ভুত রকমের ভাল লাগলো। ভিতরে কেমন যেন নাড়া দিয়ে গেল। তাইত আবারো ফিরে এলাম অধরার জগতে ধরে রাখার জন্য।
ভাল লাগা কয়েকটি লাইন  

১. "হে পাখি তোমার এ জড়তা ঘুচে যাক,
তোমার শীর্ণ ক্লিন্নতা মুছে যাক
কালো রাত্রির সাথে-ক্ষীয়মাণ ঝরোকাতে।
আবার আতশী গান,
আবার জাগুক দিগন্ত সন্ধান,
আরক্ত আভা তোমার তূতীর কণ্ঠ রবে না ঢাকা,
আবার মেলবে রক্তিম আঙরাখা
নীল আকাশের তারার বনের স্বপ্নমুখর মনে
আখরোঠ বনে
বাদাম, খুবানি বনে।"

 -ফররুখ আহমদ
 ২. "প্রবাল দ্বীপের গোঁড়া পত্তন হবে,
কি করে সে কথা হয়ে গেল জানাজানি!
দল বেঁধে এল অযুত প্রবাল কীট
কাঁপায়ে দু'পাশে দরিয়ার লোনা পানি।
রেখে এল তারা জীবনের সব সাধ,
ফেলে এল তারা জীবনের সব গান,
নব সৃষ্টির পথ চলে উন্মাদ,
ভিত্তি মূলেই জীবন করিতে দান।
----------------------------------
রাখে না খবর খোঁজ রাখে না তো কেউ,
কেউ কোন দিন সন্ধান নাহি করে,
প্রবাল কীটেরা নিভৃতে গড়ে দ্বীপ
সকল আঁখির; সকলের অগোচরে।
প্রবাল দ্বীপের গোঁড়া পত্তন হবে,
কি করে পেয়েছে তা'রা সে হাতছানি!
মৃত্যু যাদের ত্যাগের মহান ছবি
মরণেই তা'রা পায় যে জিন্দেগানি।"
 -ফররুখ আহমদ
   
৩. "কত ভেদজ্ঞান কলহ, ঈর্ষা, লোভ ও অহংকার
সব দূর করে দেবে পবিত্র নামের মহিমা তাঁর।
তোমরাই হবে নতুন পথিক তাঁর তীর্থের পথে। 
তোমাদেরই পদচিহ্ন ধরিয়া না দেখা আকাশ হতে
আসিতেছে নবযুগের যাত্রী তরুণ নওজোয়ান,
আর দেরী নাই, দেখে যাব পৃথিবীর দুঃখ অবসান।" 
- কাজী নজরুল ইসলাম 


৪. "কেউ ভুলে গেছে বলে আমি কেন ভুলে যাব পথ
এখনও সূর্য উঠে, ফুল ফোটে, পাখি গান করে
এখনও মানুষেরা স্নিগ্ধ হাতে জনপদ গড়ে
ঝড়ের দাপট দেখে আমি কেন হব ক্লান্ত স্লথ?"
-গোলাম মোহাম্মদ
   
আরও অনেক ভালো লাগা রেখে দিলাম বইয়ের পাতায়.........