সোমবার, ২৫ মে, ২০১৫

কবিতার প্রহর ১৬

বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা

কাজী নজরুল ইসলাম


বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওয়াত এসেছে নয়া যমানার
ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান।।

মুখেতে কালেমা হাতে তলোয়ার,
বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার,
হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহর
চল আগে চল বাজে বিষান।
ভয় নাই তর গলায় তাবিজ
বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান।।

নহি মোরা জীব ভোগ- বিলাসের,
শাহাদাত ছিল কাম্য মোদের,
ভিখারির সাজে খলীফা যাদের
শাসন করিল আধা জাহান-
তারা আজ পড়ে ঘুমায়ে বেহুঁশ
বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান।।

ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,
তখনো জাগিনি যখন যোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাত শামিল হওরে এশাতে
এখনো জমাতে আছে স্থান।।

শুকনো রুটিকে সম্বল ক’রে
যে ঈমান আর যে প্রানের জোরে
ফিরেছে জগত মন্থন ক’রে
সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।
আল্লাহ আকবর রবে পুনঃ
কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান।।
 

বুধবার, ৬ মে, ২০১৫

কবিতার প্রহর ১৫

এপিটাফ 

আল মাহমুদ

 

রক্তের উৎসধারা কারা আনে? কারা গায় আল্লাহর বিজয়?
ছবি কৃতজ্ঞতা : গুগল ইমেজ
আমার সালাম শুধু বলে দিও, বলো, নেই ভয়।
ভয় নেই, হে অক্ষয় অবিনাশী আত্মার পাখিরা
তোমাদের কলকণ্ঠে ছিঁড়ে যাবে আকাশের শিরা।
ভেঙে যাবে মেঘপুঞ্জ, খুলে যাবে নীলিমার খিল
পৃথিবীর দৃশ্য ছেড়ে শুরু হবে চিরঞ্জীব দৃশ্যের মিছিল।
সেখানেই বেঁচে থাকা, সেই শুরু গায়েবের ঘর
বিদ্যুৎ বিভায় হলো উদ্ভাসিত যাদের কবর।

আমরা পৃথিবীবাসী শুধু দেখি রক্ত আর ক্লেদ
বুঝি না মৃত্যুর ভাষা, সত্য আর মিথ্যার প্রভেদ।

শুক্রবার, ১ মে, ২০১৫

কিছু কথা অমলিন

জগদ্বিখ্যাত ফার্সি কবি শেখ সাদি (রহঃ) এঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সঞ্চারিত বাণী 'গুলিস্তাঁ' ও 'বুস্তাঁ' এ গ্রন্থ দু'টি যা বাংলা ভাষা সহ অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বাংলা অনুবাদ পড়তে গিয়েই মাঝে মাঝে এর কথার গভীরতায় খেই হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও মনে হয়েছে যদি মূল ভাষায় পড়তে পারতাম তাহলে হয়ত নান্দনিকতার আরেক রূপ দেখতে পেতাম!  অসংখ্য ভালোলাগার মাঝে দু-চার ছত্র।


- জ্ঞানীলোক তখনই কথা শুরু করে অথবা খাবারের মধ্যে হাত দেয়, যখন না বললে ক্ষতি হয় অথবা না খেলে মারা যায়। এভাবে তাদের কথা জ্ঞানপূর্ণ থাকে এবং খাদ্যে তার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার হয়।

- বিরান জঙ্গল ও বালুময় ময়দানে পিপাসার্ত ব্যক্তির মুক্তা ও ঝিনুক দ্বারা কি উপকার হয়? তা থাকা আর না থাকা সমান। খাদ্যশুন্য ব্যক্তি যখন ক্ষুধায় ঢলে পড়ে, তখন কোমরে বাঁধা স্বর্ণ তার কি উপকারে আসে!

- যখন তুমি প্রতিযোগিতার আশংকা দেখো, তখন ধৈর্য অবলম্বন কর। কেননা নম্রতা প্রতিযোগিতা বন্ধ করে। নম্র ব্যবহার ও মিষ্টি ভাষায় একটি উগ্র হাতিকেও চুল দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। অতএব, তুমি যেখানেই লড়াই দেখবে, নম্র ব্যবহার কর। কেননা, রেশম অতি নরম কিন্তু তা ধারালো অস্ত্র দ্বারা কাটা যায় না।

- কখনো বন্ধুর কাছে নিরাপদে বসবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ বন্ধুর অভ্যাস সম্পর্কে না জানবে। ঐ রকম শত্রুর দাঁতের জখম অত্যন্ত গভীর, যাকে দেখতে বন্ধুর মতো দেখায়।

- ঐ বন্ধুর সাক্ষাতে আমার কষ্ট হয়, যে আমার খারাপ স্বভাব কে ভালো বলে, আমার দোষসমূহকে বিজ্ঞতা বলে মনে করে এবং আমার কাঁটাগুলোকে গোলাপ-চামেলি বলে। কে এমন দুশমন আছে যে, আমাকে আমার দোষগুলো ধরে দেয়?

- দানের বৃক্ষ যেখানেই শিকড় বসায়, তার ডালপালা আসমান হতেও উপরে চলে যায়। তুমি যদি তা হতে ফল খেতে চাও, তবে কখনো দান করে ইহসান স্বরূপ করাত দিয়ে তার শিকড় কেটে দিও না। তোমাকে সম্পদ দান করে নেকী করার শক্তি দেয়া হয়েছে এজন্য যে, তুমি খোদার শোকর আদায় করো।