শুক্রবার, ১৬ মে, ২০১৪

ফেসবুক আসক্তি

অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অধিকাংশ সময় ব্যয় হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ
করেন। এটা সত্য যে ফেসবুক, টুইটার এসবের কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তা আমাদের অনেক উপকার করে চলছে। এর সাহায্যে আমাদের চিন্তা-দর্শন সহজে অন্যের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। তারপরও তারা আসক্তি সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রমাণিত এবং আমাদের বহু মূল্যবান সময় এবং শক্তি এদের পেছনে ব্যয় হচ্ছে।

এখানে কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখযোগ্য

- ইসলাম শুধু পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়েই সীমাবদ্ধ নয়। এটা সত্যিই ভাল যে ফেসবুক আপনাকে নিয়মিত সালাত আদায় থেকে বিরত রাখতে পারে না। আশা করব অন্যান্য দায়িত্বের ব্যাপারেও আপনি সৎ। একজন মুসলিম হিসেবে আপনার দায়িত্ব রয়েছে আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি (সলাত তার মাঝে একটি), আপনার পরিবারের প্রতি (পিতা-মাতার সেবা, সন্তানদের সুশিক্ষা দান, জীবনসঙ্গীর খেয়াল রাখা ইত্যাদি), আপনার সমাজ ও সম্প্রদায়ের প্রতি (অভাবগ্রস্থদের সাহায্য করা, ভাল ও উত্তমকথা পৌঁছানো, ইসলামী দাওয়াত পৌঁছানো বিশেষ করে যাদের দরকার তাদের প্রতি) এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর প্রতি (অত্যাচারিত ও অভাবগ্রস্থদের প্রতি সাহায্য, সমর্থন ও সমবেদনা জানানো), পরিশেষে আপনার নিজের প্রতি (নিজের আত্মিক উন্নয়ন, অধিক জ্ঞানার্জন, ক্যারিয়ারের উন্নয়ন ইত্যাদি)।

- 'সময়' অনেক বড় একটা দায়িত্ব। রাসূল (সা.) বলেছেন হাশরের দিন আমাদের প্রত্যেকের জীবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। বিশেষ করে যৌবনকাল আমরা কোন পথে ব্যয় করেছি? আপনি কি মনে করেন 'ফেসবুক' একটি ভাল উত্তর হবে?

এ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমি এ উদ্ধৃতিটি বলব 'যদি তুমি নিজেকে সত্যানুসন্ধানে ব্যস্ত না রাখ, তাহলে অচিরেই অনর্থক ও বাজে জিনিস তোমাকে দখল করে নেবে।' এর মানে আপনার অবশ্যই একটা লক্ষ্য থাকা উচিত যা অর্জনের জন্য সবসময় চেষ্টা করতে হবে। এটা আপনার 'ফেসবুক' ব্যবহারকে কমিয়ে দেবে কারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময়ের প্রয়োজন।

লক্ষ্য নির্ধারণের সময় খেয়াল রাখুন তা যেন খুব বেশী বড় কিংবা অবাস্তব না হয়ে যায় বরং বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ কোন লক্ষ্যই যেন হয়। এর পাশাপাশি প্রত্যেকদিনের কাজের মূল্যায়ন ও হিসাব করুন। ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে আনাটাও একটি লক্ষ্য হিসেবে রাখতে পারেন। এজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় নির্ধারণ করুন এবং কোন অবস্থাতেই এই সীমা অতিক্রম করে যাবেন না। প্রয়োজনবোধে প্রতিবার ফেসবুকে বসার আগে অ্যালার্ম বা স্টপওয়াচ ব্যবহার করুন যাতে নির্দিষ্ট সময় শেষে তা আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে।
এর পাশাপাশি আপনার অন্যদের সাহায্য ও সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। সময় কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্ত্রী কিংবা বন্ধুদের মতামত ও মূল্যায়ন করতে বলুন।
এবং সবশেষে কখনোই হতাশ হবেন না কিংবা ছেড়ে দেবেন না। লেগে থাকা এবং নিয়মিত অনুশীলনই আপনার সময় পরিচালনার ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল এনে দিবে ইন শা আল্লাহ্‌।।।

ফেসবুক আসক্তি প্রসঙ্গে OnIslam.net করা প্রশ্নের উত্তর থেকে অনূদিত।
 

রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

কবিতার প্রহর ৮

বিপরীত উচ্চারণ

আল মাহমুদ

কার্টেসী : www.freebigpictures.com

আমি নিসর্গের ভাষা বুঝি। নৈশব্দও আমার কাছে কখনো কখনো বাঙময়।
শৈশবে গাছ, মাছ, পাখি ও পতঙ্গের সাথে কথা বলে আমি অভ্যস্ত
কিছু অসুবিধে হচ্ছে মানুষকে নিয়ে। আমার ধারণা ছিল             
আমি যখন মানুষ। মানুষের ঘরেই জন্মেছি। তখন পৃথিবীর তাবৎ
মানুষের ভাষা আমি বুঝব।

কত অনায়াসে আমি প্লেনের জানালা দিয়ে মেঘের সাথে কথা বলতে বলতে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আসি।
ব্রাসেলসে এসে প্রবল ধারাবর্ষণের মধ্যে আমি বৃষ্টির ভাষা বুঝি।
বৃষ্টি আমাকে আরও সিক্ত হওয়া
আরও ভেজা বেড়াল হয়ে
প্রতিবাদহীন কবিতায় গূঢ় রহস্য সৃষ্টির কথা বলে।
আমি মুচকি হেসে কফি কাউন্টারে এসে কোলাহলমুখর আকাশযাত্রীদের
মুখনিঃসৃত ধ্বনিতরঙ্গের মধ্যে হাবুডুবু খাই।


মানুষ যে শব্দটি সবচেয়ে বেশী উচ্চারণ করে এর নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসা মানেই হল মৃত্যু, হত্যা এবং প্রতিপক্ষের উচ্ছেদসাধন।
মানুষ কোন অবস্থাতেই ঠিক শব্দটি উচ্চারণ করে না। তারা
প্রতিহিংসাকে লুকিয়ে রাখতে 'প্রেম' শব্দটি ব্যবহার করে। প্রেম
মানেই হলো গুপ্ত হত্যার আয়োজন।
আমাকে কবি হতে হলে মানুষের ভাষা বুঝতে হবে বৈকি!
আমি কি জানতাম প্রিয়জনের উচ্চারিত 'প্রিয়তম' শব্দের মানে হল
               'শুয়োরের বাচ্চা'?

আমাকে শিখতে হবে।
যেমন আমি একদা বৃক্ষের আওয়াজ থেকে অর্থ বের করে নিতাম।
নদীর কাছ থেকে রপ্ত করেছিলাম তরঙ্গের ভাষা।
আমি গোখরো সাপের হিসহিসানির মধ্যেও কোন জটিলতা দেখি না।
কিন্তু মানুষ যখন রাজনীতি, মানবকল্যাণ ও গণতন্ত্রের কথা বলে
তখন যেন মনে হয় একটা আস্ত দেশকে কতিপয় গূঢ়ার্থবাদী পিশাচ
                  ছারখার করে দিচ্ছে?
মানুষের ভাষার মত দুর্বোধ্য পৃথিবীতে আর কিছু নেই।

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

অনাহুত

রাতের কাজগুলো মোটামুটি গুছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আগামীকালের করণীয় কাজগুলোর কথা ভাবছিলাম। অনেক কিছুর না হওয়ার সম্ভাবনাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। হঠাৎ করে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল হলটা। প্রথমটায় কিছুই বুঝে উঠতে পারি নি। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে মেয়েদের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসার শব্দে বুঝলাম ভুমিকম্প হয়েছে।

কত পরিকল্পনাই না করে ঘুমাতে যাচ্ছিলাম! অথচ আজ রাতও হতে পারত আমার জীবনের শেষ রাত। যদি ঘুমের মাঝে নেমে আসে এমনই কোন আযাব! কেন জানি এই অনিবার্য সত্যটা বার বার ভুলে যাই। মুহূর্তের এ ধাক্কাটা যেন তারই স্মরণ করিয়ে দিল।
 অথচ কিছুক্ষণ পরেই পুরো ব্যাপারটা একটা মজায় পরিণত হলো। যে ভয় নিয়ে সবাই নেমে এসেছিল তার চেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে সবাই এখন উপরে উঠছে। যেন সবাই তাদের অনন্ত জীবন পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেছে। মনে পড়লো গতকাল সন্ধ্যায় পড়া সূরা মুলক এর একটি আয়াত

"যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেবেন এবং অকস্মাৎ ভূপৃষ্ঠ জোরে ঝাঁকুনি খেতে থাকবে এ ব্যাপারে কি তোমরা নির্ভয় হয়ে গিয়েছো?"
- সূরা মুলক : ১৭

আসলেই দুনিয়ার নেশায় আমরা এমনই বুঁদ হয়ে আছি যে যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের উপর বড় কোন বিপদ এসে না পড়ছে ততক্ষণ আমাদের হুঁশ ফেরানো মুশকিল।
আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করেন। আমীন।

কান পেতে রই

শব্দের অন্যরূপ দেখার প্রতীক্ষায়
আমি ছিলাম না,
চেয়েছিলাম সত্যের সাক্ষ্য হতে।
নির্ভেজাল সম্পর্কের টানাপোড়েনের দগ্ধতা
আমি চাইনি,
চেয়েছিলাম স্বপ্নের সুতোয় উল বুনতে।
হয়তবা দগ্ধতার আরেক নাম শুদ্ধতা,
আর শব্দের ভেতর জন্ম নেবে শব্দ,
ধ্বনির নাড়ী ছিঁড়ে বের হয়ে আসবে প্রতিধ্বনি,
বাঁকের শেষে।।