বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

কবিতার প্রহর ১৭

নিশান- বরদার

ফররুখ আহমদ


দিন রাত্রির বোঝা হ'ল আজ দুঃসহ গুরুভার,
স্খলিত পথীর আয়োজন চলে পশ্চাৎ যাত্রার,
চারদিকে বন মরণ শর্তে জীবনের অধিকার_
এখানে তোমার নিশান ওড়াও হে নিশান বরদার!

তোমার নিশান উড়ছে কোথায় নির্জন প্রান্তরে,
জনারণ্যের এখানে শুণ্য শাখা,
নীড় ছেড়ে তার স্বপ্নের পাখী বহুদিন পলাতকা 
জরাস্থবির তার সুদূরের পাখা
মাটিতে গুমরি মরে_
ভেঙে পড়ে বার বার
হে নিশান বরদার!

চারদিকে কারা ফেলে বিষাক্ত শ্বাস,
কারা বয়ে আনে করোটিতে মৃতাসব,
শবের মিছিলে ভিড় ক'রে আসে শব;
মুখ বয়ে আনে চরম সর্বনাশ।

সে পাশবতার আজ উদ্যত ফণা
বিষাক্ত করে সুদূর সম্ভাবনা,
ভেঙে পড়ে তার পুচ্ছ আঘাতে স্বপ্নের চারাগাছ,
লাত মানাতের সঙ্গে নাচে পিশাচ
আধো জীবন্ত তনু;
রং চটা তার আকাশে কখন নিভেছে বর্ন ধনু।

সে সিদরাতুল- মুনতাহার 
পথ ভোলা বুলবুলি,
প্রতি মুহুর্তে আবিল করে সে
এই ধরণীর ধুলি,
ম্লান জুলমাতে আজ সে বিবর গড়ি'
দীপ্ত দিনেরে ক'রেছে কখন বিষাদ শর্বরী।
তার কণ্ঠের বীভৎস চীৎকারে_
কেঁপে উঠে বারে বারে
উষর মাটির বক্ষে অনুর্বর
দুঃস্বপ্নের ঘর।

শঙ্কিত তার দিনের আকাশ,
বিভীষিকা ভরা ঘুম,
ছিন্ন ডেরার দু'য়ারে আঘাত
হানে মরু সাইমুম,
তার কলিজার রক্তে রঙিন গড়ে উঠে ইমারত,
তার কঙ্কাল বিছায়ে জালিম মাপে মিনারের পথ;
পথে পথে আজ শোনো তার হাহাকার
হে নিশান বরদার!

এখানে তোমার নিশান ওড়াও, নিশান ওড়াও বীর,
এখানে শুধুই আবছায়া রাত্রির
তিমির নিবিড়তর,
এখানে তোমার সূর্য প্রকাশ করো।
জনারণ্যের শাখায় শাখায় জাগে প্রাণ- ব্যাকুলতা
আনো আনো তার বিপুল তৃষার দুকূলে উচ্ছলতা
সমুদ্র স্রোতোধার;
হে নিশান বরদার।।

~ ঈষৎ সংক্ষেপিত