সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

কবিতার প্রহর ৭

লাশ

(তেরশো পঞ্চাশে)

ফররুখ আহমদ

 

এ কোন্ সভ্যতা আজ মানুষের চরম সত্তাকে
                                           করে পরিহাস?
কোন্ ইবলিস আজ মানুষেরে ফেলি মৃত্যুপাকে
                                           করে পরিহাস?
কোন্ আজাজিল আজ লাথি মারে মানুষের শবে?
ভিজায়ে কুৎসিত দেহ শোণিত আসরে
                              কোন প্রেত অট্টহাসি হাসে?
মানুষের আর্তনাদ জেগে উঠে আকাশে আকাশে!

কোন প্রবৃত্তির কাছে আজ ওরা পড়িয়াছে বাঁধা?
গোলাবের পাপড়িতে ছুড়িতেছে আবর্জনা, কাদা
কোন্ শয়তান?
বিষাক্ত কামনা দিয়ে কে ভরায় আকাশের রঙিন খিলান?

কার হাতে হাত দিয়ে নারী চলে কাম সহচরী?
কোন সভ্যতার?
কার হাত অনায়াসে শিশু কণ্ঠে হেনে যায় ছুরি?
কোন সভ্যতার?
পাঁজরার হাড় কেটে নৃত্য সুর জেগে উঠে কার?
শ্রমিকের রক্তপাতে পান-পাত্র রেঙে উঠে কার?
কোন সভ্যতার?

মানুষ তোমার হাতে করিয়াছে কবে আত্মদান,
তারি শোধ তুলে নাও হে জড়-সভ্যতা শয়তান!
শিশুর শোণিত হেসে অনায়াসে করিতেছ পান,
ধর্ষিতা নারীর দেহে অত্যাচার করিছ অম্লান,
জনতার সিঁড়ি বেয়ে উর্ধ্বে উঠি অতি অনায়াসে
তারে তুমি ফেলে যাও পথ-প্রান্তে নর্দমার পাশে।

জড়পিণ্ড হে নিঃস্ব সভ্যতা!
তুমি কার দাস?
অথবা তোমারি দাস কোন্ পশুদল!
মানুষের কী নিকৃষ্ট স্তর!
যার অত্যাচারে আজ প্রশান্তি ; মাটির ঘর : জীবন্ত কবর
                        মুখ গুঁজে প'ড়ে আছে ধরণীর 'পর।

সুসজ্জিত-তনু যারা এই জড় সভ্যতার দাস,
যাদের পায়ের চাপে ডুকরিয়া কেঁদে উঠে পৃথিবী, আকাশ,
তারা দেখে নাকো চেয়ে কী কলুষ দুর্গন্ধ পুরীষে
তাদের সমগ্র সত্তা পশুদের মাঝে চলে মিশে!
কুক্কুর, কুক্কুরী
কোন ব্যভিচারে তারা পরস্পর হানিতেছে ছলনার ছুরি,
আনিছে জারজ কোন্ মৃত সভ্যতার পদতলে!
উরুর ইঙ্গিত দিয়ে তাদের নারীরা আজ মৃত্যু পথে চলে,
লোভের নিকট ক্ষুধা বুকে নিয়ে অত্যাচারী পুরুষেরা চলে,
মানুষের পথ ছেড়ে বহু নিম্নে মৃত্যুর অতলে।

তাহাদেরি শোষণের ত্রাস
করিয়াছে গ্রাস
প্রশান্তির ঘর,
যেথা মুখ গুঁজে আছে শীর্ণ শব ধরণীর 'পর।

হে জড় সভ্যতা!
মৃত সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ!
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ ;
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃংখলগত মাংসপিণ্ডে পদাঘাত হানি'
নিয়ে যাব জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি' ;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও :
                                                           ধ্বংস হও
                                                      তুমি ধ্বংস হও।।

~(ঈষৎ সংক্ষেপিত)
 

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৪

কেন আমার দু'আ কবুল হচ্ছে না?

আপনি যখন দু'আর কোন ফল পাচ্ছেন না তখন পর্যায়ক্রমে দু'টি কাজ করুন

১. আপনার গুনাহগুলোর জন্য বেশী বেশী তওবা করুন এবং আল্লাহ্‌ তা'আলার নিকট ক্ষমা চান। 
২. এমন কী কোন সম্পর্ক রয়েছে যা আপনি ছিন্ন করেছেন? তা পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করুন। ইচ্ছাকৃতভাবে কি কোন ঋণ পরিশোধে দেরী করছেন? এমন কী কোন পাপ রয়েছে যা আপনি জেনে শুনে চালিয়ে যাচ্ছেন? এখনই সময় বন্ধ করার।

এরপরও যদি আপনার দু'আ কবুল না হয় এবং আপনি যথেষ্ট আন্তরিক ও মনোযোগী তাহলে সন্তুষ্ট
থাকুন। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আপনার জন্য আরো বড় কিছুর পরিকল্পনা করে রেখেছেন। সাথে রয়েছে ক্ষমা ও পুরস্কারের বিশালতা।
প্রার্থনা চালিয়ে যান। সর্বোত্তম ফলাফলই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ্‌ তা'আলা যেন আমাদের সকলকে কবুল  করে নেন। আমীন।


Navaid Aziz- এর facebook page থেকে অনূদিত।

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

কবিতার প্রহর ৬

কালো চোখের কাসিদা 

আল মাহমুদ


ভোরের নদীর মতো মনে হয় তোমাকে কখনো,
কখনো বা সন্ধ্যার নদী, আবছা ছায়ার নিচে
দূর গ্রামে সূর্য ডুবে যায়
পড়ন্ত আলোর মধ্যে প্রকৃতির রহস্যে জড়ানো
আমি দেখি সেই মুখ নত আরও-নত প্রার্থনায়।

ঠাণ্ডা জায়নামাজের বুটিতোলা পবিত্র নকশায়
একটি আরশোলা হাঁটে। এ কার আত্মা, কার প্রাণ?
নাকি কোন মুরতাদ জিন লাঞ্ছনার খাদ্য খুটে খায়
আর শুকনো কাপড়ে দেখে অগ্নিশিখা, নিজেরই সমান।

তোমার সিজদা দেখে এ ঘরের পায়রা ডেকে ওঠে
গম্বুজের ভেতরে যেন দম পায় সুপ্ত এক দরবেশের ছাতি,
কি শীতল শ্বাস পড়ে। শান্ত শামাদানের সম্পুটে
বাতাসের ফুঁয়ে যেন নিভে গেল ফজরের মগ্ন মোমবাতি।

তুমি কি শুনতে পাও অন্য এক মিনারে আজান? 
কলবের ভিতর থেকে ডাক দেয়, নিদ্রা নয়, নিদ্রা নয়, প্রেম
সমুদ্রে খলিয়ে অজু বসে থাকে কবি এক বিষণ্ণ, নাদান।
সবারই আরজি শেষ। বাকি এই বঞ্চিত আলেম।

আমার তসবী শুনে হয়তো বা দ্রব হন তিনি
যার হাতে অদৃষ্টের অনিবার্য অদৃশ্য কলম,
কবিরও ভাগ্যের লিপি স্মিতহাস্যে লিখে যান তিনি
অদেখা ক্ষতের দাহে মেখে দেন আশার মলম।

তোমার সালাত শেষে যে দিকেই ফেরাও সালাম
বামে বা দক্ষিণে, আমি ও মুখেরই হাসির পিয়াসী;
এখনও তোমার ওষ্ঠে লেগে আছে আল্লাহ্‌র কালাম
খোদার দোহাই বলো ও ঠোঁটেই, 'আমি ভালোবাসি।'

প্রভুর বিতান থেকে প্রেম আসে আদমের আত্মা হয়ে, নারী
পেরিয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ, ছায়াপথ, আণবিক মেঘের কুণ্ডল,
চুইয়ে প্রাণের রস গ্রহে গ্রহে কুয়াশা সঞ্চারি
কবির চোখের মধ্যে হয়ে যায় একবিন্দু জল।

আমার রোদনে জেনো জন্ম নেয় সর্বলোকে ক্ষমা
আরশে ছড়িয়ে পড়ে আলো হয়ে আল্লাহ্‌র রহম,
পৃথিবীতে বৃষ্টি নামে, শষ্পে ফুল; জানো কি পরমা
আমার কবিতা শুধু অই দুটি চোখের কসম। 

স্বর্ণযুগের হাতছানি ৪

খলীফা হবার পূর্বে একবার উসমান (রা.)- এর খাদ্য বোঝাই বাণিজ্য বহর সিরিয়া থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে। দুর্ভিক্ষের দরুন মানুষ তখন শোচনীয় দুর্দশায় পতিত ছিল। মদিনার বহু ব্যবসায়ী তাঁর কাছে এসে বলে, "দেশে খাদদ্রব্যের চাহিদা কত তীব্র তা তো আপনি ভাল করেই জানেন। এই দ্রব্যসম্ভার আমাদের নিকট বিক্রি করে দিন। আমরা দ্বিগুণ মূল্য দেব।" তিনি বললেন, "আল্লাহ্‌ আমাকে দশগুন মুনাফা দেয়ার ওয়াদা করেছেন। তোমরা কি আমাকে এর চেয়ে বেশী দিতে পার?" তারা বলল, "না"। তখন হযরত উসমান (রা.) আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা করলেন যে, "এই বাণিজ্য বহরের সমস্ত সম্পদ আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে দরিদ্র ও মিসকিনদের জন্য সাদকা করে দিলাম।"


রাসূল (সা.) একবার আসরের সলাতে সালাম ফিরিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লেন এবং লোকদের ডিঙ্গিয়ে তাঁর স্ত্রীদের কামরার দিকে গেলেন। লোকেরা তা দেখে ঘাবড়ে গেল। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে দেখলেন যে লোকেরা তাঁর তড়িঘড়ির কারণে হতবাক হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এক টুকরা সোনা ঘরে রয়ে গিয়েছিল। আমার নিকট তা জমা থাকা আমি পছন্দ করছিলাম না। তাই তা বিতরণ করে দেয়ার হুকুম দিয়ে এলাম।

তথ্যসূত্র : 
ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতি - সাইয়্যেদ কুতুব 
রিয়াদুস সালেহীন