শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

এক টুকরা আলো

আগে কখনও আমার এত একা লাগত না। একাডেমিক লাইফের শেষে এসে ইদানীং বেশ একা একা লাগে। হল, ল্যাব, টিউশন, হল। এই আপাতত রুটিন। সাথের যারা ছিল সবাই প্রায় চলে গেছে। কদাচিৎ ই দু-একজনকে চোখে পড়ে। কথা বলার সুযোগ আর তেমন হয়ে উঠেনা। ফোনে কথা বলতে গেলেও সেই বাসায়, তাও দিনে সর্বোচ্চ ৩-৪ বার। জীবনটাকে মনে হয় কি রকম একঘেয়ে রকমের একা। সবকিছু যেন ছেড়ে ছেড়ে যাচ্ছে। দিনশেষে বাসে চড়ে যেসব মেয়েরা হলে ফিরে আসে তাতেও আমি পেছনে পড়ে রই। রুটিন মাফিক আজও টিউশন এ যাচ্ছিলাম। যাত্রাপথটা মাজারের পেছন দিক হওয়ায় প্রায়ই দেখি রাস্তায় কিছুলোক শুয়ে থাকে। কিন্তু, আজ রাস্তার পাশের ময়লার স্তুপের কাছে দূর থেকে দেখলাম কি যেন একটা? মনে হয়নি মানুষ। তাও কাছ দিয়ে গেলাম। দেখি মানুষই বটে। কয়েকটা কাঠি একত্র করে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলে যা হয় তার বেশি কিছু নয়। মহিলার বয়স আনুমানিক সত্তর হবে। গায়ে অসংলগ্ন কাপড়। অচেতন নয় সম্ভবত। ভাবলাম হয়ত এই মাজারের কাছেই থাকে। চিন্তার বাঁধ ভাঙতেই দেখি টিউশনির বাসায় চলে এসেছি। ভুলেই গিয়েছিলাম। দুঘণ্টা পর আবার যখন ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরছি গাঢ় অন্ধকারে তখন চারপাশটা ঢেকে গেছে। দ্রুত হাঁটছি। হঠাৎ হেডলাইটের এক টুকরা আলোয় দেখতে পেলাম কাঠির মত পা-টা যেন এখনও নড়ছে। হঠাৎ করেই আমি আমার একাকীত্বের সংজ্ঞাটা হারিয়ে ফেললাম। এই অন্ধকার এখনও বৃদ্ধা মহিলাটির যাওয়ার জায়গা করে দিতে পারেনি। আমি তো তাও হলে এসে পেটপুরে ভাত খাব, রাতে আরাম করে ঘুমাব, আমার একটা কম্পিউটার আছে। চাইলেই আমি অনলাইনে সময় কাটাতে পারি। অন্ধকারে অনুভব করলাম আমার দুচোখ ভিজে গেছে। ভাবনাগুলো ও জেঁকে বসেছে, কত অকৃতজ্ঞ আমি আমার স্রষ্টার প্রতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন