বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

আমার শৈশবের নদী

ছোটবেলার ঈদগুলো যখন আসত তখন ঈদের আনন্দের সাথে বাড়তি একটা আনন্দও নিয়ে আসত। আর তা হল বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। তখন মনে হত সারা বছরের সব খুশি বুঝি এখনই। সবসময় কেন এমন থাকেনা! এ ক'টা দিন যেন চোখের পলকেই চলে যায়।

বাড়িতে যাওয়ার পরপরই আমাদের তীব্র আকর্ষণ থাকত নানাবাড়ি যাওয়ার প্রতি। তখন ঈদ হত শীতকালে। সেখানে শীতের সকালের আমেজই আলাদা ছিল। কিন্তু, আমার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল দিন শেষের ক্ষণটা, যখন আমরা সবাই মিলে নদীর পারে যেতাম। দু'মিনিটের হাঁটাপথ শেষে এই বিশালতা যেন অপার্থিব এক প্রাপ্তি। আমার শৈশবের নদী সেই 'তিতাস'।

দিনের শেষ আলোটা নিভে যাওয়ার আগেই যখন সবাই চলে আসতে চাইত, আমার তখনও মনে হত আমি কিছুই দেখিনি।অতৃপ্ত আত্মা আমার।
ছবি : ওয়েব
কিছুক্ষণ আগে সাইমুম.নেট এ অনেক অনেক সুন্দর কিছু কবিতার মাঝে আল মাহমুদ এর 'তিতাস' কবিতাটি শুনলাম, মনে হল আমার মনের কথাগুলোই যেন কবির ভাষায় প্রান খুঁজে পেয়েছে।

এ আমার শৈশবের নদী, এই জলের প্রহার
সারাদিন তীর ভাঙে, পাক খায়, ঘোলা স্রোত টানে
যৌবনের প্রতীকের মত অসংখ্য নৌকার পালে
গতির প্রবাহ হানে।
--------------------------------------------
আমি তার খুঁজিনি কিছুই,
কিছুই খুঁজিনি আমি। যতবার এসেছি এ তীরে,
নীরব তৃপ্তির জন্য আনমনে বসে থেকে ঘাসে,
নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণ ভরেছি এ বুক।
একটি কাশের ফুল তারপর আঙুলে আমার
ছিঁড়ে নিয়ে এই পথে হেঁটে চলে গেছি শহরের
শেষ প্রান্তে যেখানে আমার ঘর, নরম বিছানা,
সেখানে রেখেছি দেহ। অবসাদে ঘুম নেমে এলে,
আবার দেখেছি সেই ঝিকিমিকি শবরী তিতাস,
কী গভীর জলধারা ছড়াল সে হৃদয়ে আমার।।


ছবি : ওয়েব
এখন আর কোনকিছুর জন্যই সময় হয়ে উঠেনা। যান্ত্রিকতার চাপে পিষ্ট হয়ে গেছি। শুনেছি সেই নদীও আর আগের মত নেই। আমার হৃদয়ে তবু জাগ্রত হয়ে আছে তার সেই অনন্তযৌবনা রূপ।

1 টি মন্তব্য: