বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

স্বর্ণযুগের হাতছানি ১

একবার কুরাইশ বংশের একজন সম্মানিত মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়ল। কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাকে এই অভিযোগ থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা যখন দেখল কোনভাবেই তাকে নিরপরাধ প্রমাণের উপায় নেই, তখন তারা একযোগে উসামাহ (রা.) কে গিয়ে ধরল। তিনি ছিলেন মহানবী (সা.) এর খুবই প্রিয়পাত্র। তাদের অনুরোধে উসামাহ (রা.) সুপারিশ করতে রাজি হলেন।

উসামাহ (রা.) রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। তাঁর কথা শোনামাত্রই রসূল (সা.) এর চেহারায় ভাবান্তর দেখা দিল। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি বললেন : 'তুমি কি আল্লাহ্‌র নির্ধারিত শাস্তির বিধানের ব্যাপারে সুপারিশ করছ?'

এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিলেন এবং বললেনঃ "হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা গোমরাহ হয়ে গিয়েছে। কারণ, কোন সম্মানী ব্যক্তি যখন চুরি করত তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করত তখন তার উপর শরীয়াতের শাস্তি কায়েম করত। আল্লাহ্‌র কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত কেটে দেবে।"


হযরত উমার (রা.) এর শাসনামলে বিখ্যাত 'আমুর রামদা'র দুর্ভিক্ষ চলাকালীন সময়ে তিনি শপথ করেন, যতদিন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে ততদিন তিনি ঘি ও গোশত স্পর্শ করবেন না। এভাবে থাকতে থাকতে তাঁর শরীরের চামড়া শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। 
কিছুদিন পর বাজারে দুধ ও ঘি বিক্রি হতে দেখা গেল। খলীফার জনৈক ভৃত্য তাঁর জন্য দুধ ও ঘি চল্লিশ দিরহাম দ্বারা কিনে আনলেন এবং বললেন, "এখন আল্লাহ্‌ আপনার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে দিয়েছেন। বাজারে দুধ ও ঘি বিক্রির জন্য এসেছে, আমি তা কিনে নিয়ে এসেছি।" কিন্তু খলীফা যখন সেগুলোর দাম জানতে পারলেন তখন বললেন, "খুব চড়া দামে কিনেছো, দুটোই সাদকা করে দাও। আমি অপব্যয় করে খাওয়া পছন্দ করিনা।" তারপর বললেন, "জনগণের যে দুরাবস্থা হয় তা যদি আমারও না হয় তাহলে তাদের সমস্যার গুরুত্ব আমি কি করে বুঝবো।" 

তথ্যসূত্র :
ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতি - সাইয়্যেদ কুতুব 
আমরা সেই সে জাতি - আবুল আসাদ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন