ঝরোকায়
ফররুখ আহমদ
মুসাফির জনতার মৃদুশব্দ নিম্নমুখ নীল পেয়ালায়
মিশে গেল আকাশের স্তব্ধ ঝরোকায়!
সুর্মা পাহাড়ে লুপ্ত অগ্নিবর্ণ গুলরুখ শিখা।
রাত্রি আজ গাঢ় ঘন! মন
দক্ষিণ হাওয়ায় ভেসে মুসাফির উজানী-পবন,
গন্ধ খুঁজে ফেরে।
আকাশেরে করিয়া চৌচির
তার কান্না লুটে পড়ে
উত্তর সাগর তীরে দক্ষিণের সামুদ্রিক ঝড়ে,
সন্ধান করে সে ইতস্তত
নীড় তাঁর শ্রাবণের পাখীদের মত।
গন্ধ আসে দূরান্তর হ'তে।
হে প্রিয়! ভেসেছি আমি দীর্ঘ নওবাহারের ঘন নীল স্রোতে,
তখনি তোমার
ও-সুরভি ভার
স্পর্শ করি গেছে বারে বারে;
প্রখর আতসী স্রোতে ভেসে আমি চাইনি তোমারে।
আজ আমি খুঁজে মরি
পাতায় পাতায়, ঘাসে ঘাসে,
পাই না তোমাকে। শুধু বহু দূ'র হ'তে গন্ধ আসে
ভেসে যায় মাঠ, মন মুহুর্তের রক্তিম প্রশ্বাসে।
পাই না তোমারে।
------------------------
মুগ্ধ মন আকুল সৌরভে
নাহি জানি ভুলেছে সে কবে
রজনীগন্ধার স্নিগ্ধ ভীরু বাতায়ন,
রুদ্ধ কারা দ্বার ভাঙি'আজ সে করিছে দূরে কার অন্বেষণ!
নৈশ বাতাসের তীরে
আঁধারের বুক চিরে
নেমে আসে ঘুম।
মনে হয় আকাশ কুসুম
তোমার সন্ধান।
তবু লাগে জোয়ারের টান,
সুপ্তির অতল যেয়ে হানা দেয় জাগ্রত চেতনা,
কী অসহ্য বেদনায় লাগে বুকে সৌরভ -মূর্ছনা!
বন-চামেলির স্রোতে ভেসে যাই কোথায় সুদূরে
ভারাক্রান্ত তনু ছেড়ে মন আজ ফেরে ঘুরে ঘুরে__
দক্ষিণ বাতাসে
নিজেক হারায়ে ফেলে ছুটে চলে ব্যাকুল আশ্বাসে।
প'ড়ে থাকে ধুলিমুঠি, প'ড়ে থাকে ভ্রান্ত অহংকার__
ব্যথাতুর হ'য়ে ওঠে সমগ্র চেতনা, সত্তা, মনের কিনার।
ধূলিতলে মিশে যায় রজনীগন্ধার- সুঠাম, সুগোল তনুতল,
ফোটায়ে বিশুভ্র দল, ঝরায়ে সুরবি অনর্গল
অরণ্য হেনার ঝড়ে সৌরভ মর্মরে__
ভুলে যেয়ে আবর্তের টান,
অন্তরের ঘ্রাণ,
পাপড়ির রূপ ছিড়ে খোঁজে সে গভীর মূলে সুরভি বিতান...
(সংক্ষেপিত)