রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৪

একাকীত্বের পথে

ট্রেনে ওঠার পর থেকে সেই যে মুখ বন্ধ হওয়া তার আর বিরাম নেই। একাকীত্বের শুরুটা ওখান থেকেই। বার ঘণ্টা পর যখন ষ্টেশন এসে পৌঁছলাম স্বাভাবিকভাবেই কেউ নিতে আসার কথা না। সত্যটা জানার পরও কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করছিলাম। জনতার ভীড়ে তা যেন আরও প্রকট হয়ে উঠছিল।
তারপরের যাত্রা সংক্ষিপ্ত। অটোরিকশায় আধঘণ্টাতেই পৌঁছে যাওয়ার। গন্তব্য ছাত্রী হল। কিন্তু হলের গেটে এসে একাকীত্বের বিশালতায় যেন বড় একটা হোঁচট খেলাম। ব্যক্তিগত কাজ থাকায় ছুটি শেষ হওয়ার দু'দিন আগেই চলে এসেছি। এন্ট্রি খাতায় স্বাক্ষর করতে যেয়ে দেখি গতকাল মাত্র একজন এসেছে। প্রায় সাড়ে চারশ মেয়ের থাকার জায়গা এই হলে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যখন প্রবেশ করছি তখন রাত প্রায় দশটা। প্রত্যেকটা রুমের গুমোট অন্ধকার আমাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করছিল যে পা ফেলতেই কষ্ট হচ্ছিল। রুমে এসে ঘরে-বাইরে সাধ্যের মধ্যে থাকা সবগুলো লাইট ই জ্বেলে দিলাম।

এই যে অন্ধকার আর নিঃসঙ্গতা, অল্পসময়েই এর মাঝে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। অথচ আমি জানি এর শেষ আছে। কাল-পরশুর মাঝেই হলের প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসবে। কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বেও এক পা এক পা করে যে পরম একাকীত্বের দিকে যাচ্ছি, এর শেষ কোথায়? জমাট বাঁধা সে অন্ধকার ঘরে সমস্ত প্রিয়জন একাকী ফেলে চলে আসবে। এ নিয়তি এড়ায় সাধ্য কার! সেদিন চাইলেও কারও সাথে কথা বলা যাবেনা। ঘুটঘুটে আঁধার হবে নিত্যসঙ্গী। শুধু তাঁরা ব্যতীত দয়াময় প্রভু যাদের নিজ থেকে আলো দেবেন। সে পাথেয় কোথায়!

মৃত্যু, চারপাশে ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলোর মাঝে সবচেয়ে পরিচিত ঘটনা। তারপর ও কোন এক অজানা কারণে আমরা তা ভুলে থাকতে চাই। মনে হয় আমার কিছু হবে না। যা হওয়ার অন্য লোকের। অথচ নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে আসলে এক মুহূর্ত ও বিলম্ব করা হবে না। You will die এই ভিডিওটা কয়েকমাস পর আবার দেখলাম। বিক্ষিপ্ত মন তবুও যদি কেন্দ্রীভূত হয়!
চলে যাওয়ার আগে যেন আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সতর্ক হওয়ার তৌফিক দান করেন। আমীন। 

"আল্লা-হুম্মাজ'আল লী নূরান ফী ক্বাবরী ওয়া নূরান ফী 'ইযা-মী।"
অর্থ : হে আল্লাহ্‌! আমার কবরকে আমার জন্য জ্যোতির্ময় করে দাও, আমার হাড্ডিসমূহেও।
                                                                                তিরমিযী ৩৪১৯
      

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন